দেশে ভাইরাস পুষে রেখে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে না

কে এ এস মুরশিদ
কে এ এস মুরশিদ

বিনিয়োগের জন্য একটা পরিবেশ লাগে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেখানে আগেই নানা সমস্যা ছিল। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় নতুন বিনিয়োগ খুব বেশি হবে বলে আমার মনে হয় না। তবে নতুন নতুন কিছু সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেখানে বিনিয়োগ হবে। যেমন স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে একটা মৌলিক পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয়। আমরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে অনেক অর্থ ব্যয় করি। এ ব্যবসাটা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে খুব ভালো হবে। সার্বিকভাবে আমার মনে হয় ‘নিউ নরমাল’ (নতুন স্বাভাবিক) পরিস্থিতি না এলে বিনিয়োগের ধারা স্বাভাবিক হবে না। এ ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ যেগুলো আসবে, তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। যারা এ ক্ষেত্রে ভালো করবে, নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবসা কৌশল প্রয়োগ করবে, তারাই এগিয়ে যাবে। কেউ যদি মনে করে, সবকিছু সাধারণভাবেই আগের ধারায় ফিরে যাবে, আমার ধারণা সে চিন্তা ভুল।

 সামনের দিনগুলোতে পণ্যের চাহিদায় ভাটা পড়তে পারে। আমরা স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কিছু নীতি পদক্ষেপ ভাবতে পারি, যাতে চাহিদা চাঙা রাখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, সরকার অল্প ব্যয়ে অধিক কর্মসৃজনের মতো প্রকল্প নিতে পারে। এতে দুটো লাভ হবে। প্রথমত, বেকারত্ব কিছুটা ঘুচবে। যাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে, তারা কিছু টাকা পেলে চাহিদা আবার বাড়বে। আমরা এ রকম বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের কথা ভাবতে পারি।

বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, যদি আমরা পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখতে পারি। বিশেষ করে, চীনা বিনিয়োগ আমরা আকৃষ্ট করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। এর সঙ্গে জাপানি ও অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করছে স্বাস্থ্যঝুঁকি আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি, তার ওপর। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা আলাদা কোনো বিষয় নয়, এর সঙ্গে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ জড়িত। স্বাস্থ্যঝুঁকি না কমাতে পারলে নিজেদের লোকই পাব না, বিদেশিরা কেন আসবে।

আগামী দিনগুলোতে কর্মসংস্থান কমবে। কারখানা বন্ধ হবে। ছাঁটাই হবে। তার কিছু কিছু নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখানেও সমস্যা করোনা। কাজেই আমাদের বোঝা উচিত ছিল, দেশে ভাইরাস পুষে রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে না। এখনো হয়তো সময় আছে অর্থনীতির বড় একটা অংশকে বাঁচানো। ঢাকা ও চট্টগ্রামে হয়তো প্রাদুর্ভাব বাড়বে। দেশের অন্য এলাকাকে এখনো সুরক্ষার সময় আছে।

নতুন করে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। পুরোনো অনেকের যদি কাজ না থাকে, নতুনেরা কোথায় পাবে। ফলে কাজ হারানো মানুষ গ্রামে থাকবে। দুর্ভোগে থাকবে। তাদের হাতে নগদ টাকা বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়াতে হবে। আমার মনে হয়, যারা দক্ষ, তাদের নিয়োগকারীরা ছাড়বে না। বাকিদের ক্ষেত্রে একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

কাজ হারানোর ফলে কিছু অস্থিতিশীলতা হোক, না হোক, হতে পারে, না–ও হতে পারে; কিন্তু কথা হলো মানুষের জীবনযাত্রায় এই পরিস্থিতি আমরা চাই না। এ জন্য একটি বলিষ্ঠ পরিকল্পনা থাকা দরকার।