বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের 'সাহিত্য' জানতে চাই

হোসেন জিল্লুর রহমান
হোসেন জিল্লুর রহমান

করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাতের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। তাই আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের ‘সাহিত্য’ জানতে চাই। সাধারণত বাজেটে দুটি অংশ থাকে। একটিতে বরাদ্দ থাকে, অন্যটিতে কথামালা। আমরা বরাদ্দ নিয়েই বেশি মাতামাতি করি। প্রতিবার বাজেটের কথামালা অংশে নানা ধরনের চটকদার উক্তি থাকে। কিন্তু আমরা আগামী বাজেটে কথামালা অংশে দেখতে চাই, কতটা কৌশলের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বিন্যাস করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কি না, তা বুঝতে চাই। এটাই স্বাস্থ্য বাজেটের ‘সাহিত্য’ অংশ।

বাজেটের ‘সাহিত্য’ অংশ আমাদের বুঝতে সহায়তা করবে, সরকার যেসব বরাদ্দ দিয়েছে, এর যৌক্তিকতা আছে কি না। কোন ভিত্তিতে সরকার দিয়েছে—এর ব্যাখ্যা থাকা উচিত। কোভিড–১৯ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বাজেটের ‘সাহিত্য’ অংশের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। কেননা করোনাসংকট অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের মধ্যে এই উপলব্ধিটা আছে কি না, সেটা বাজেটের মাধ্যমে ফুটে উঠবে। গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক বাজেট দিলে স্বাস্থ্য খাতের গুণগত মানের উন্নতি কখনো হবে না। যেমন আমলারা গত বাজেটের চেয়ে ১০ শতাংশের মতো বাড়িয়ে বরাদ্দ চান। স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে বাজেট বরাদ্দ চাওয়া হয় না। বাজেটে যত টাকাই দেওয়া হোক না কেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যদি সার্বিকভাবে ঢেলে সাজানো না হয়, তবে সুষম বিনিয়োগ হবে না।

মাঠপর্যায়ে কী ধরনের সমস্যা আছে, সেটা জেনে স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ কৌশল ঠিক করা উচিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এই খাতের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহি নেই বললেই চলে। দুর্নীতি কমানো যাচ্ছে না। বেপরোয়াভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। কেনাকাটায় বড় ধরনের চক্র তৈরি হয়েছে।

প্রকল্প নির্বাচনের সময় জনবলকাঠামোর বিষয়টি মাথায় আনা হয় না। যেমন ২০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হলো, কিন্তু জনবল আছে ৫০ শয্যার। ফলে অবকাঠামোর অপচয় হচ্ছে। বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যায় না। জনবল নিয়োগেও দীর্ঘসূত্রতা আছে। জনপ্রশাসনের তথাকথিত লালফিতার দৌরাত্ম্য ভেঙে বের হয়ে যাওয়া উচিত। এ ছাড়া চাহিদার তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাব আছে। গুণগত স্বাস্থ্য শিক্ষায় নজর দিতে হবে। আবার তরুণ চিকিৎসকেরা পাস করে বসে আছেন। তাঁদের সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থায় আনা যাচ্ছে না।

স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল—এগুলো কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। ফলে জেলা–উপজেলার গরিব মানুষ আরও বেশি সহজে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। 

স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন এখন আর টোটকা দাওয়াই দিয়ে হবে না। অতি মুনাফার স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সুলভ স্বাস্থ্যসেবার বিকাশ করতে হবে, যাতে গরিব মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পান। করোনাসংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বাজেট থেকে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার শুরু হওয়া উচিত। আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দেওয়া দরকার। কাঠামোগত ও বিনিয়োগ—উভয় খাতেই সংস্কার প্রয়োজন।

লেখক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা