বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি ১১ সংগঠনের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শ্রমিক ছাঁটাই নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতির বক্তব্য সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ১১ শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন। অন্যথায় তারা আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

রাজধানীর তোপখানা রোডে নিজেদের অস্থায়ী কার্যালয়ে আজ শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোটটির এমন ঘোষণার পর বিজিএমইএ আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করেছে, 'সংগঠনের সভাপতি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি। সংগঠন হিসেবে এ ধরনের ঘোষনা দেওয়ার কোন সুযোগও নেই। বিজিএমইএ সভাপতি কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়া ও সম্ভাব্য শ্রমিক ছাঁটাই বিষয়ে তাঁর গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।'

গত বৃহস্পতিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় মাত্র ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা চালাতে হবে। সেটি হলে শ্রমিক ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এটি অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা, কিন্তু করার কিছু নেই। বিজিএমইএর সভাপতির এই বক্তব্যের পর সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ১১ শ্রমিক সংগঠনের জোটের নেতারা করোনাকালে শ্রমিক ছাঁটাই বা কারখানা লে-অফ না করা, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা ও মৃতদের একজীবনের সমপরিমান ক্ষতিপূরন প্রদান, শ্রমিকদের নিত্যপণ্য দেওয়ার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জোটটির সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার পরও বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, জুন থেকে শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে। এটি অত্যন্ত অমানবিক ও অযৌক্তিক। কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ করোনার মহামারী চলাকালে এভাবে শ্রমিকের পেটে লাথি দিতে পারে না। পৃথিবীর সব দেশে শ্রমিকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফ্রান্সে শ্রমিকদের ৮০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৮০ শতাংশ, জার্মানিতে ৭৮ শতাংশ, ফিলিপাইনে ৭০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের ৬ মাসের বেতনের নিশ্চয়তা সরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে রপ্তানি খাতের শ্রমিকদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার, ওএসকে গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের নির্বাহী উপদেষ্টা শামিম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনের পর বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, 'গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনের প্রতি বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিজিএমইএ মনে করে, বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়নি। সংগঠনের সভাপতি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি...।'

বিজিএমইএ বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্চ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে কোনো কারখানায় সামর্থ্যরে শতভাগ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রাখার ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলো ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। চলতি জুনে কারখানাগুলো গড়ে ৫৫ শতাংশ সক্ষমতা ব্যবহার করে কোনরকমে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখছে। জুলাই পরিস্থিতি এখনই অনুমান করা কঠিন। উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলো পোশাক শিল্পের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং হবে।

পোশাকশিল্প মালিকদের এই সংগঠনটি বলেছে, চলমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। গত দুই মাসে বিজিএমইএর সদস্য ৩৪৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বাকী আছে আর মাত্র ১ হাজার ৯২৬টি কারখানা। করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাকী কারখানাগুলো হয় একে একে বন্ধ হয়ে যাবে অথবা পূর্ণ সক্ষমতার ব্যবহার ছাড়াই টিকে থাকার চেষ্টা করবে।

এদিকে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এক বিবৃতিতে বলেছে, 'বিজিএমইএর সভাপতির শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ও সরকারের কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকারের লঙ্ঘন। এতে শ্রমিক অঙ্গনে যে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে তার দায় মালিকপক্ষকেই নিতে হবে।'

স্কপের যুগ্ম সমন্বয়কারী ফজলুল হক ও নইমুল আহসানসহ কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, আনোয়ার হোসেন, ওয়াজেদুল ইসলাম খান, মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সাইফুজ্জামান বাদশা, চৌধুরী আশিকুল আলম, রাজেকুজ্জামান রতন, কামরুল আহসান, শামিম আরা ও পুলক রঞ্জন ধর আজ শনিবার এই বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেন, পোশাকশিল্প মালিকপক্ষ নিজেদেরকে এতটাই শক্তিশালী মনে করে যে কোন আইন, নীতি, সামাজিক দায় কিংবা প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা করছে না। শ্রমিকদেরকে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।