আমাদের নীতি গ্রহণেই গলদ আছে

আকবর আলি খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
আকবর আলি খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সর্বজনীন বিমা ও সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করতে গেলে বিরাট পয়সার দরকার হবে। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে তা কঠিনও নয়। তিনটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য। বিশ্বের অনেক দেশ এ খাত নিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোও এখন নাকানি-চুবানি খাচ্ছে।

 প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের মৌলিক চিকিৎসাব্যবস্থাটা কেমন? আদৌ এটা আছে কিনা। বেসরকারি খাতের সুন্দর-সুশোভিত ভবন হলেই তো আর চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন বোঝায় না। দেখতে হবে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চিকিৎসার কী ব্যবস্থা সরকার করে রেখেছে। বর্তমান চিত্রটার কথা তো
ভাবাও যায় না। চিকিৎসা খাতের ভালো করতে গেলে আমাদের মানের দেশগুলোর দিকে তাকাতে পারি। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ভালো করেছে। দেশগুলোকে আমরা মডেল হিসেবে নিয়ে এগোতে পারি।

 কিন্তু আমাদের নীতি গ্রহণেই গলদ আছে। উদাহরণস্বরূপ যদি বলি বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আর রেল খাতের বরাদ্দ কেন প্রায় কাছাকাছি হবে। রেল খাত কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? কত যাত্রী যাওয়া-আসা করে আর কত পণ্য ওঠানামা করে রেলে? এ খাত থেকে কী আসে? আসলে কী আর বলব, সবকিছু চলছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। আর সর্বজনীন বিমার কথা বললে অনেক কথাই বলতে হবে। বিমা খাতটির প্রতি মানুষের আস্থা আনাটা আগে জরুরি। এ ব্যাপারে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু হলে সর্বজনীন বিমাটার আর দরকার পড়বে না।

 সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থাটা দরকার। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। কত যে বয়স্ক মানুষ কষ্টে রয়েছেন?

 কিন্তু সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর বাস্তবতায় কি সরকার আছে? এত টাকা সরকার পাবে কই? টাকা অবশ্য আছে। রাজস্ব সংগ্রহের বাস্তবতা থাকলেও সরকার তা সংগ্রহ করতে পারছে না। যদিও সব কল্যাণকামী রাষ্ট্রেরই বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শেষ জীবনে মানুষ যাতে কষ্ট না পান, সেই ব্যবস্থা করা। তবে এ ব্যাপারে কিছু করতে গেলে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। অন্য দেশের মডেলগুলো অনুসরণ করে স্বল্প পরিসরে হলেও চালু করে সরকার দেখতে পারে। ভালো ফল দিলে পরে ব্যাপকভাবে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। কিন্তু যতটুকু শুনেছি, এগুলোর কোনো উদ্যোগই সরকার নিচ্ছে না। তাহলে তো হতাশ হওয়ার কারণ থাকবে।