সাধারণেরা এখন, প্রতিষ্ঠান পরে

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারী ক্ষুদ্র বা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ পাওয়ার সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্য শেয়ারধারীরা অবশ্য লভ্যাংশ পাবেন ৩০ সেপ্টেম্বরের পর।

বর্তমানে ব্যাংকগুলোর প্রায় ৩৪ শতাংশ শেয়ার স্থানীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি ৬৬ শতাংশ শেয়ার ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা, পরিচালক, বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের কাছে রয়েছে।

এদিকে দুটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গতকাল শনিবার বলেন, লভ্যাংশ অনুমোদন করে পরিচালনা পর্ষদ। তারা যদি লভ্যাংশ না নিতে পারে, তাহলে লভ্যাংশ অনুমোদনও করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি প্রয়োজন পড়বে।

তবে মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে, এমন ব্যাংকগুলোই আপাতত নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগির প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রের মতে, মূলত শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আহ্বানেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে। ১ জুন তিনি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে শেয়ারবাজারের স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের সুদ স্থগিত ও বাজারে ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় করতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখনই লভ্যাংশ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রস্তাব করেছিলাম। সেটি কার্যকর হলে ব্যক্তিশ্রেণির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখনই লভ্যাংশ পাবেন। অন্যরা পাবেন সেপ্টেম্বরের পর। এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রস্তাব করেছিলাম। আশা করছি, সেগুলোর বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নেবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১১ মে ঘোষণা দেয়, ব্যাংকে তারল্য পরিস্থিতি বজায় রাখতে কোনো ব্যাংক ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। পাশাপাশি লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়েও বেশ কিছু নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে যেসব ব্যাংক ইতিপূর্বে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল, তারা তা স্থগিত করে। বাতিল করা হয় অনেক ব্যাংকের লভ্যাংশ বিতরণ।

>

ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শিগগির নগদ লভ্যাংশ পাবেন
অন্য বিনিয়োগকারীরা অবশ্য লভ্যাংশ পাবেন ৩০ সেপ্টেবরের পর
পরিচালকেরা লভ্যাংশ নিতে না পারলে তা পর্ষদ অনুমোদন করবে না বলে দুই
এমডির আশঙ্কা

ব্যাংকগুলোর প্রায় ৩৪ শতাংশ শেয়ার স্থানীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাড়তি সময় নেয়নি, এমন ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের সাড়ে ১২ শতাংশবা তার বেশি হলে সামর্থ্য অনুসারে সেটি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। বাড়তি সুবিধার অধীনে না থাকা ব্যাংকের মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের মধ্যে হলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। আর বাড়তি সুবিধার আওতায় থাকা যেসব ব্যাংকের সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সমন্বয়ের পর মূলধন সংরক্ষণের হার ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ বা তার বেশি, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশসহ নগদ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। আর বাড়তি সুবিধা সমন্বয়ের পর যেসব ব্যাংকের মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশের কম বা ন্যূনতম ১০ শতাংশ হয়, তারা ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিতে পারবে। কোনো ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার
১০ শতাংশের কম হলে ওই ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই ঘোষণার পর শেয়ারবাজার চালু হলে ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, প্রতিবছর বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে লভ্যাংশ প্রদানের সুযোগ করে দিত। আর এবার ভালো ব্যাংকগুলোকেও লভ্যাংশ বিতরণ স্থগিত করতে হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে লভ্যাংশ বিতরণ স্থগিতের নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানানো হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই নির্দেশনা পুরোপুরি বাতিল না করে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চিন্তা মাথায় রেখেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোর মূলধন ভিত্তির ওপরই নির্ভর করবে তারা লভ্যাংশ দিতে পারবে কি না। পাশাপাশি অনেক ব্যাংকের লভ্যাংশ বিতরণ স্থগিতের সময় আরও বাড়তে পারে।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে গভর্নরের আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমর্থন দেবে।

জানা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টির মূলধন গত ডিসেম্বরে ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে। বাকি ছয়টি ব্যাংকের মূলধন কম। তবে এটাই চূড়ান্ত হিসাব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, নিরীক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মধ্যে চূড়ান্ত হিসাবের পরই প্রকৃত মূলধনের
হিসাব পাওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবছর নানা ছাড় দিয়ে ব্যাংকগুলোর মূলধন ভালো দেখানোর সুযোগ দেয় এবং তাদের লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।