নিত্যপণ্য সহজলভ্য করতে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে

গোলাম মওলা
গোলাম মওলা

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত। অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। তাই নিত্যপণ্য যদি কিছুটা সহজলভ্য করা যায়, তবে মানুষ স্বস্তি পাবে। যেমন এক কেজি চিনি আমদানিতে ২৪ টাকা শুল্ক ও কর দিতে হয়। সে জন্য ভোজ্যতেল, ডাল, চিনির মতো নিত্যপণ্য আমদানি শুল্কমুক্ত করা দরকার। এমন পদক্ষেপে যেটুকু রাজস্ব কমবে, তা বিলাসপণ্যের ওপর শুল্ক ও কর বৃদ্ধি করে পূরণ করা সম্ভব। আশা করি, অর্থমন্ত্রী নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ও করের বোঝা হ্রাস করতে পদক্ষেপ নেবেন।

মহামারি করোনাভাইরাস কবে পুরোপুরি দূর হবে, তা কেউ বলতে পারছে না। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করতে হবে, তারা যেন কারখানা চালিয়ে যেতে পারে। তাহলেই খাদ্যের কোনো সংকট থাকবে না। তাই যারা খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে নিয়োজিত, সেসব প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করতে পারে সরকার। অন্যদিকে করোনার কারণে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন। হঠাৎ করে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকেরা কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনেছেন। আবার মানুষের আয় কমে যাওয়ায় অধিকাংশ ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীর আয় কমে গেছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ে যেন কোনো জোরজুলুম না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ থাকবে।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কম দামে পণ্য সরবরাহ করে আস্থা অর্জন করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে টিসিবি যদি সরাসরি পণ্য উৎপাদন কিংবা আমদানি করে, তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। সে জন্য টিসিবিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ দরকার। অন্যদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের মতো লোকসানি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করতে হবে নতুবা লাভজনক করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে মানুষের করের টাকার অপচয় হবে না। সেই অর্থ অন্য খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। অবশ্য তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতটির দুর্নীতি বন্ধ করা। বছর বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উইপোকার মতো তা খেয়ে ফেলছেন। সরকারি হাসপাতালে দামি দামি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও তা ফেলে রাখা হয়। সাধারণ মানুষকে পয়সা খরচ করে বাইরে থেকে সেবা নিতে হয়। তাই বরাদ্দ বাড়ানোর থেকেও বর্তমানে দুর্নীতি বন্ধ করা বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আশা করছি, বাজেটে সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন কোনো বড় প্রকল্প গ্রহণ না করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলে মতো বড় প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ চলমান থাকবে। তাহলে ঘুরে দাঁড়াতে সুবিধা হবে। তাই বাজেটে বড় প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো যাবে না।

গোলাম মওলা : সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি