করোনাকালের অর্থনীতি নিয়ে চার বিশিষ্ট উদ্যোক্তার অভিমত

>

জীবন না জীবিকা। নাকি দুটোই একসঙ্গে। কিন্তু সেটা কীভাবে। আলোচনা এখন এটাই। অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে সরকার নিয়েছে নানা উদ্যোগ। অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগের মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার জন্য আছে নানা পরিকল্পনা ও কৌশল। এ নিয়ে চার বিশিষ্ট উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলেছেন সুজয় মহাজন, রাজীব আহমেদ ও শুভঙ্কর কর্মকার।

এম আনিস উদ দৌলা।
এম আনিস উদ দৌলা।


সবাই মিলে খাটব, সবাই মিলে বাঁচব
এম আনিস উদ দৌলা

করোনাভাইরাস পৃথিবীতে যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে, তা অভূতপূর্ব। আমাদের জীবদ্দশায় আমরা এই পরিস্থিতি দেখিনি। পুরো পৃথিবীর বিজ্ঞানী, গবেষক, সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের নতুন করে অনেক কিছু ভাবতে হবে। রাজনীতিবিদেরাও দ্বিধাগ্রস্ত। তাঁরা ‘লকডাউন’ করবেন, নাকি সব খুলে দেবেন, এ সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

 এখন সামনে প্রশ্ন আসছে, জীবন নাকি জীবিকা আগে। আমার মত হচ্ছে, জীবন ও জীবিকার যে দ্বন্দ্ব, সেখানে জীবিকার প্রয়োজনটাই বড় করে দেখতে হবে। কারণ, দীর্ঘকাল ধরে জীবিকা বন্ধ রাখা যাবে না। তাহলে আবার জীবন সংকটে পড়বে। তবে জীবিকাকে সচল করতে গিয়ে যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, তা কমাতে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যবস্থা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। কারণ, করোনা পৃথিবী থেকে খুব সহজে যাচ্ছে না, যত দিন ভ্যাকসিন না আসে।

 আমার মত হলো দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা যাবে না। তাহলে আমরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যে সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তা ব্যাহত হবে। সুতরাং আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। বিপরীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থাগুলো মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

 করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার একটা সুযোগ এসেছে। এখন জাতীয় নেতৃত্বের উচিত সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করা। আবার আমাদের উচিত নেতৃত্বকে শ্রদ্ধা করা। এখন নেতৃত্বের পরিপক্বতা দেখানোর সময়। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা আমাদের সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাবেন, আমরা তাঁদের সহায়তা করব।

 বাজেটে সরকারের সম্পদের জোগান সীমিত হয়ে গেছে। এখন সবাইকে ছাড় দিতে হবে। সরকারের উচিত কারও মুখ না চেয়ে, যেখানে যে খাত বাঁচানো দরকার, সেখানে সেভাবে সহায়তা দেওয়া। পুরো বিষয়টি সততা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেখতে হবে। এখন যদি কোনো খাত ধ্বংস হয়, তবে আবার গড়ে তোলা কঠিন হবে। তাই যেভাবেই হোক ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা দেওয়া দরকার।

 অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে সরকার সহায়তা দিচ্ছে। কর্মসংস্থান থাকবে না, এ কথা বলা উচিত না। আবার থাকবে, সেটাও বলার দরকার নেই। কথা হওয়া উচিত এমন যে আমরা এখন সবাই মিলে খাটব, সবাই মিলে বাঁচব। আর যদি একজন ব্যর্থ হই, আরেকজনকে নিয়ে ধ্বংস হব। তাই এখন কোনো রাজনীতির সময় নয়, এখন অর্থনীতির জন্য আমি কী করতে পারি, সেটা আমাকেই নিঃস্বার্থভাবে করতে হবে।

 আমাদের স্বাস্থ্য খাত কতটা দুর্বল, এটা এখন অনুধাবনে আসছে। এ জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও বিদেশে চলে যাচ্ছিল। বাঁচার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে নজর দিতে হবে। তবে রাতারাতি উন্নতি সম্ভব নয়। এখন সব সম্পদ ব্যবহার করতে হবে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা ও জীবিকার সুরক্ষা, তথা অর্থনীতি সচল রাখতে।

রোকিয়া আফজাল রহমান।
রোকিয়া আফজাল রহমান।


জীবিকার চেয়ে জীবন আগে
রোকিয়া আফজাল রহমান

আমার কাছে জীবিকা ও দেশের অর্থনীতির চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে মানুষ যেকোনো বিপর্যয় কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। অনেককে বলতে শুনছি, জীবিকা ও অর্থনীতির স্বার্থে লকডাউন (অবরুদ্ধ) তুলে নেওয়া হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। কিন্তু আমরা দেখছি দিন দিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এ দেশে আমরা অনেক ঝড়–তুফান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখেছি। ওই সময়গুলোতে সম্পদের চেয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচানোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়েও ভয়াবহ। তাহলে কেন জীবনের চেয়ে জীবিকার প্রয়োজন বড় হয়ে উঠবে? ঝড়ের পরে গড়তে প্রাণপণে লড়বে।

প্রায় দুই মাস ধরে ঘরেই আছি আমি। এ সময়ে পরিবার–পরিজন, চেনা–জানা সবার খোঁজখবর নিয়ে দিন পার করছি। দৈনন্দিন অনেক প্রয়োজন মেটাতে অনলাইন ও বিকাশের মতো সেবা ব্যবহার করছি। অনেকে আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন নিয়মিত। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সাধ্য অনুযায়ী তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করছি। গত মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি আমার জানাশোনার মধ্যে যত আক্রান্তের খবর পেয়েছি তার চেয়ে বেশি আক্রান্তের খবর পেয়েছি গত ১০–১২ দিনে।

এ করোনাকালে মানুষ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বেশি সময় পার করছে। পুরুষেরা নানাভাবে ঘরের কাজে যুক্ত হচ্ছেন। এ ঢাকা শহরে দূষণ কমেছে। এগুলো আমার করোনার ইতিবাচক দিক মনে হয়।

সামনে বাজেট। আমি চাই, সরকার এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। বর্তমানে করোনার কারণে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি ঠিক করতে হলে দরকার খুবই শক্তিশালী একটি প্রশাসন যন্ত্র। কিন্তু সেখানে বেশ ঘাটতি দেখছি।

দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে করোনা ভয়ের পাশাপাশি চাকরি নিয়েও একধরনের দুশ্চিন্তা ভর করেছে। আমি জানি, বর্তমান বাস্তবতায় ব্যবসা–বাণিজ্যের খুব খারাপ অবস্থা। এ ক্ষতি কাটাতে সময় লাগবে। অনেক উদ্যোক্তা যাঁরা বড় বড় ঋণ নিয়ে শিল্প সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের অবস্থা বেশি খারাপ। সরকারের উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। সরকার উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াক, আর উদ্যোক্তারা দাঁড়াক তাঁর কর্মীদের পাশে।

করোনাকালে দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের প্রতি আমার প্রত্যাশা, আমরা সবাই মিলে মিতব্যয়ী হব। প্রত্যেকে কিছু খরচ বাঁচিয়ে যাঁরা খুব খারাপ অবস্থায় আছেন তাঁদের পাশে দাঁড়াব। বিপদে মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়াবে—এ সত্যকে আবারও প্রতিষ্ঠা করতে হবে সবার সম্মিলিত চেষ্টায়।

তপন চৌধুরী।
তপন চৌধুরী।


খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ের পথ বেছে নিয়েছি
তপন চৌধুরী

করোনা ধনী–গরিব মানে না। গরিব মানুষ যেমন আতঙ্কে, একই আতঙ্কে ধনীরাও। সুতরাং করোনাভাইরাসের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে এ জন্য কাজ করে যেতে হবে। এ সময় অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়াটাও একধরনের সহায়তা। আপনি ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানে আপনার পরিবার, পরিজন, চারপাশের মানুষ নিরাপদ। নিরাপদ মানুষই পারে বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে।

যখন কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন যোদ্ধারা পাশের যোদ্ধার পরিচয় কী, সেটি জানতে চান। যুদ্ধের ময়দানে পরিচয় জানাটা জরুরিও নয়। করোনার বিরুদ্ধে জীবন–জীবিকার লড়াইটিও যুদ্ধের মতো। এ যুদ্ধে লড়তে হবে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আমাদের এটাই সেরা সময়।

আরেকটি বিষয়, ছোট্ট একটি দেশ। সম্পদের সীমাবদ্ধতা যেমন আছে, তেমনি আছে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিসহ আরও নানা সমস্যা। কেউ সমালোচনা করতে চাইলে এক শ একটা কারণ খুঁজে বের করা যাবে। কিন্তু সমালোচনার চেয়ে করোনার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে সবার আগে দরকার মানুষকে উজ্জীবিত রাখা। মনোবল দৃঢ় রাখতে সহায়তা করা। আমি মনে করি, এটি করতে হলে সমালোচনার বদলে ভালো কাজের উদাহরণগুলো মানুষের সামনে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। এ দুঃসময়ে অনেকে অনেক ভালো কাজ করছে। সেগুলোকে যত বেশি মানুষের সামনে তুলে ধরা যাবে, তত বেশি উৎসাহিত হবে। নিজেও অনুপ্রাণিত হবে ভালো কাজে।

আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে ঘরবন্দী। স্ত্রী, আমি ও আমার বাড়ির কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, সবাই মিলে আছি। কাউকে বাড়ির বাইরে যেতে দিচ্ছি না, আবার বাইরে থেকে কেউ ঢুকছে না। নিজের পক্ষে যেটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, তার সবটুকুই করছি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে।

স্কয়ার গ্রুপের পক্ষ থেকে আমরা একটি হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। প্রতিদিনই চেনাজানা অনেকে আইসিইউ সেবা চেয়ে যোগাযোগ করছে। কিন্তু কোনো আইসিইউ খালি নেই। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই রাতারাতি আইসিইউর সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। আবার করোনা চিকিৎসার জন্য এক্স–রে মেশিন থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী আলাদা লাগে। সব হাসপাতালের পক্ষে তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এসব সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়েই আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায় সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এখন মোটেই দোষারোপের সময় নয়।

জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চিন্তাও এখন মানুষের সামনে বড় হয়ে উঠেছে। এটাও সত্য, কয়েক মাস ধরে বলতে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে আছে। করোনার শুরু থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠান কৃচ্ছ্রসাধনের পথ বেছে নিয়েছে। একেবারে জরুরি নয় এমন কোনো খরচ করিনি। ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরে চলো নীতি নিয়েছি। তবে কাজ করুক বা না করুক, কর্মীদের বেতন–ভাতা সময়মতো পরিশোধ করেছি। এ দুর্দিনে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে না হেঁটে প্রতিষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ব্যয় সাশ্রয়ের পথ বেছে নিয়েছি।

করোনা আমাদের যে শিক্ষা দিল তাতে মনে হয় না ভবিষ্যতে এক ছাদের নিচে বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ করার ব্যবস্থাটি আর কার্যকর থাকবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। একক পণ্যনির্ভর ব্যবসা বা রপ্তানির বদলে পণ্যবৈচিত্র্য আনতে হবে।

সবশেষে এ দেশের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান, এই বিপদের দিনে একে অপরের পাশে থাকুন। নিজের খরচ কমিয়ে আপনার পাশের বিপদগ্রস্ত লোকটির পাশে দাঁড়ান। আপনার কৃচ্ছ্রসাধন যেন অন্যের উপকারে আসে, সেই চেষ্টা করুন।

আবুল কাসেম খান।
আবুল কাসেম খান।


উন্নয়ন চিন্তায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে
আবুল কাসেম খান

করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমরা একটু আতঙ্কিত। দুশ্চিন্তার বড় বিষয় হলো, যেসব এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, সেখানেই স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, মানুষের চলাফেরা বেড়ে যাচ্ছে। এই রকম পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, আমাদের কঠোর ব্যবস্থায় যাওয়া দরকার।

 দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার পর আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যা এখন হলে নিতাম না। সঠিক তথ্য-উপাত্তের অভাব ও পরিস্থিতি ঠিকভাবে অনুধাবন না করতে পারায় আমাদের এ সম্মিলিত ভুল হয়েছে। এখানে মনে রাখতে হবে যে আমাদের কাছে পরীক্ষিত কোনো পথ নেই, যেটা ধরে এগোলে সফলতা আসবে। কেউ তো কারও ক্ষতি করতে চায় না। যুক্তরাজ্যও কিন্তু ভুল করেছিল। দেরিতে লকডাউন করার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

এখন সরকার সংক্রমণ রোধে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক লকডাউন করছে। মূল কথা হলো, সুস্থ মানুষকে সুস্থ রাখতে হবে। সবাই অসুস্থ হয়ে গেলে সেটা দেশ হিসেবে আমাদের জন্য একটা খারাপ নজির হবে। অর্থনীতির জন্যও বিপদ। অনেক দেশেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারা লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসছে।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের অনেক কিছু করতে হবে। কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হবে। এখানে বাড়তি জোর দরকার। তার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সরকার সুদে ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ দিচ্ছে। এটা ভালো পদক্ষেপ। বাজেটে করপোরেট করে ৫ শতাংশ ছাড় দিয়ে ওই অর্থ বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করে দেওয়া যেতে পারে। আবার কর্মসংস্থান সুরক্ষার শর্তে আরও কিছু ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তাহলে ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন-ভাতা দিয়ে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে পারবেন।

এতে অবশ্য সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে। কিন্তু সরকারকে এটিও চিন্তা করতে হবে যে কর্মসংস্থান কমে গেলে মানুষের আয় কমে যাবে। আয় কমে গেলে সেটার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। আর কর্মসংস্থান ঠিক থাকলে সুফল পাবে অর্থনীতি।

সরকারের ব্যয়ও কমানো যাবে না। কমলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্প কমিয়ে আনা যেতে পারে। কিন্তু বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গাড়ি কেনার মতো প্রকল্প বাদ দিয়ে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে।

করোনার কারণে কিছু ব্যবসার সম্ভাবনা খুলে যাচ্ছে। একটি দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্য দেশে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পণ্যের উৎস দেশেও বৈচিত্র্য আসছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ যদি করোনার জন্য সেই সম্ভাবনার তালিকায় না থাকে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগকারীরা আগে ব্যবসার খরচ, শ্রমিকের মজুরি ইত্যাদি হিসাব করত। এখন কিন্তু স্বাস্থ্যগত বিষয়টিও বিবেচনা করবে। বিনিয়োগকারীরা চিন্তা করবে, একটি দেশে বিনিয়োগ করলাম, সেখানে যদি কারখানার শ্রমিকেরা অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে কী করব?

উন্নয়ন চিন্তায় অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানে অর্থনীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যতক্ষণ পর্যন্ত করোনার টিকা আবিষ্কার না হয়, ততক্ষণ আপনি অনিরাপদ থেকে যাবেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগেও আমাদের অর্থনীতির যে অবস্থা, তার সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। আমি মনে করি, এই ধাক্কায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি করে ফেলা দরকার।