ব্যাংকঋণনির্ভর করা যাবে না বাজেট

সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সালেহউদ্দিন আহমেদ।

করোনাভাইরাসের কারণে যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, তার পুরোটাই ব্যাংকঋণনির্ভর হয়ে গেছে। তাই ব্যাংকগুলোকে দিয়ে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ, ব্যাংকগুলোর অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। আমানতের অবস্থা খারাপ, পরিচালনাগত ত্রুটি আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ঘাটতি বিদ্যমান। পুরো ব্যাংক খাত সমস্যায় আছে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ছাড় দিয়ে, বিশেষ রেপো দিয়ে তারল্য জোগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সংবিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) আরও কমিয়ে আনা যেতে পারে। এতে বাজারে আরও কিছু তারল্য যুক্ত হবে। আর ব্যাংকে আমানত না আসার জন্য তো সরকার দায়ী, কেন জোর করে সুদহার কমিয়ে দিল।

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ব্যাংকগুলোর মূল দায়িত্ব পালনের সুযোগ এসেছে। এটা বিশেষ সময়, এখনই তাদের অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে মুনাফার বিষয়টিকে ছেড়ে দিতে হবে। এই বছরে কোনো মুনাফার চিন্তা করা যাবে না। শূন্য মুনাফায় ব্যবসা করতে হবে। শেয়ারধারীদেরও কোনো মুনাফা দেওয়া যাবে না। কারও মুনাফা হলে তা দিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে পারে। কারণ, আমানতকারীদের টাকা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেসব সুদ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা সরকারকে বহন করতে হবে। সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপালে হবে না।

ব্যাংকাররা প্রণোদনার ঋণ দিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চাইলেও তা এখন দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর অনেক হিসাব আছে। এটা এত সহজ নয়। ব্যাংকগুলো অহেতুক অনেক দাবি করছে। সরকার তো বলেনি কাউকে ঋণ দিতে। ব্যাংক সব যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেবে। কাউকে যোগ্য মনে না করলে দেবে না। পুরো ব্যাংকিং প্রক্রিয়া মেনে ঋণ দিতে হবে, তাহলেই যোগ্য ব্যক্তি ঋণ পাবেন। এতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ঋণ যদি আবার পুরোনো দুষ্ট গ্রাহকেরা পায়, তাহলে অর্থনীতি আরও খারাপ হয়ে পড়বে। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে।

আর এবার যে বাজেট হতে যাচ্ছে, তা গতানুগতিক ধারার বাজেট থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব না দিয়ে অর্থনীতি ও জনগণের জন্য ভালো কিছু থাকতে হবে। আর এই সময়ে কোনো কর না বাড়িয়ে বরং কমাতে হবে। তবে কর প্রশাসনে যে সমস্যা আছে, তা দূর করে আয় বাড়াতে হবে। সরকারি পর্যায়ে বাহুল্য খরচ কমিয়ে আনতে হবে।

আগামী বাজেট ব্যাংকঋণনির্ভর করা যাবে না। এতে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হবে। বিদেশি উৎস থেকে কম সুদে ঋণ আনতে হবে। সরকার ব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বন্ড ছাড়তে পারে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩-৪ শতাংশ কিনে নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমনিতেই নতুন টাকা ছাড়ছে, পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পুরোটাই তো রিজার্ভ মানি থেকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে, এসব টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক