মুঠোফোন নম্বরেই ব্যাংক হিসাব

মুঠোফোন। ছবি: রয়টার্স
মুঠোফোন। ছবি: রয়টার্স
>মোবাইল অপারেটর রবি ও এয়ারটেলের ৫ কোটি গ্রাহককে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক করার লক্ষ্যে চুক্তি করেছে নগদ।

শুরু থেকেই মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া মেনে চলার পাশাপাশি গ্রাহক সম্পর্কে বিস্তারিত (কেওয়াইসি) জানতে হতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতাদের। এখন আর সেই সব করতে হবে না, মোবাইল নম্বরকেই পরিণত করা যাবে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাবে। কাজটি করছে সরকারি সংস্থা ডাক বিভাগের ডিজিটাল সেবা ‌‌‘নগদ’।

রবি ও এয়ারটেলের ৫ কোটি গ্রাহককে সহজে নিজেদের গ্রাহক করার লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটর দুটির সঙ্গে চুক্তি করেছে নগদ। চুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর ফলে মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ নতুন গ্রাহক পেয়েছে নগদ।

জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক হওয়ার নতুন এই ব্যবস্থায় গ্রাহককে কোথাও যেতে হচ্ছে না, এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) জমা দিতে হয় না। কেওয়াইসিরও কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। বাংলাদেশে এভাবে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক হওয়ার সুযোগটা একেবারেই নতুন। আগে থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সেবা রকেটের গ্রাহক হওয়ার জন্য যেকোনো অপারেটরের ৩২২# ডায়াল করে নিবন্ধন করার সুযোগ চালু রয়েছে। এরপর এজেন্টের কাছে গিয়ে এনআইডি জমা দিয়ে ও কেওয়াইসি ফরম পূরণ করার পরই গ্রাহক হওয়া যায়। তবে এতে মোবাইল নম্বরের শেষে বাড়তি একটি নম্বর যুক্ত হয়।

যেভাবে নগদে হিসাব খুলতে হয়: নিজের রবি নম্বর থেকে ১৬৭# নম্বরে ডায়াল করলে পর্দায় ভেসে আসে, নগদে হিসাব খুলতে রবির কাছে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নগদকে শেয়ার করতে রাজি কি না। রাজি হওয়ার পর নগদ হিসাব খুলতে পিন নম্বর দিতে বলা হয়। আর পিন নম্বর দিলে মুহূর্তেই খুলে যায় নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় লাগে।

জানতে চাইলে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভির এ মিশুক সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রবি ও এয়ারটেলের গ্রাহকেরা মাত্র ১০ সেকেন্ডে হিসাব খুলতে পারছেন। কয়েক দিনে আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। এর ফলে আমাদের গ্রাহক ২ কোটি ছাড়িয়েছে।’

তবে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক সময় একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাধিক মোবাইল সিম কেনা হয়। বাসার সহকারী, গাড়ির চালক এমনকি আত্মীয়রাও এই সিম ব্যবহার করেন। এসব সিম দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খোলার পর কোনো জালিয়াতি হলে সেই দায়ভার কিন্তু যাঁর পরিচয়পত্র, তাঁকেই নিতে হবে। আবার অনেকে অন্যের পরিচয়পত্র ব্যবহার করেও সিম কিনে থাকেন। সে ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এদিকে নগদের দাবি, তারা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা করার ফলে ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে হিসাব খোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা সরকারের সেবা ‘পরিচয় ডটকম’-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক মিনিটে ‌নগদ হিসাব খোলার সুযোগ নিয়ে এসেছে। রবি ও এয়ারটেলের সঙ্গে চুক্তির ফলে গ্রাহকের নগদ হিসাব খোলা যাচ্ছে মাত্র ১০ সেকেন্ডে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব দিয়ে সব আর্থিক সেবাই মিলবে। সামনের দিনে এসব হিসাবের বিপরীতে ঋণসুবিধাও চালু হবে। তাই হিসাব খোলায় সব প্রক্রিয়া মানতে হবে। নগদ এখনো পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নয়। তাই কীভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে, তা বলা যাচ্ছে না।

দেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে আসে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, রকেটের হিসাবও সহজে খোলা যায়। নিবন্ধন করার পর পরিচয়পত্র যাচাই এবং কেওয়াইসি ফরম পূরণ করতে হয়। একটি হিসাবের জন্য এ দুটো কাজ অত্যাবশ্যকীয়।

বাড়ছে এমএফএস হিসাব

করোনা মহামারির কারণে এমএফএস হিসাব খোলা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ঘরে বসেই হিসাব খোলা যাচ্ছে। পোশাকশ্রমিকদের বেতন পরিশোধ, দরিদ্র পরিবারগুলোকে সরকারের আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান এবং ঘরে বসে পরিষেবার বিল দেওয়ার সুবিধা থাকায় হিসাব খোলার হার বেড়েছে।

জানা গেছে, গত দুই মাসে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭০ লাখ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৬ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। তাঁরা বেতন-ভাতা পেতে হিসাব খুলেছেন। অন্যান্য সেবাদাতাও নতুন গ্রাহক পেয়েছে।

বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিকাশ হিসাবের প্রয়োজন অনেক বেড়েছে। ঘরে বসে টাকা পাঠানো, বিল প্রদান, সরকারি ভাতা গ্রহণ ও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাচ্ছে।