বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ২৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

বাজেট
বাজেট

এবারের বাজেটে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে দেশীয় গ্যাস আহরণের গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা খরচ করবে সরকার।

২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাকিটা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কোম্পানি, সেখানকার গঠিত তহবিল ও ঋণ থেকে আসবে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বরাদ্দ রাখার কথা ঘোষণা করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং জ্বালানিতে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই দুই খাতে মোট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ১১৭টি।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়ন না হওয়ায় দেশের জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহে অনেক ঘাটতি রয়েছে। সেখানকার গ্রাহকদের অভিযোগ, দিন ও রাত মিলিয়ে বহু ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আর লো ভোল্টেজ সমস্যা তো রয়েছেই। বিতরণ সংস্থাগুলো এ জন্য দায়ী করে সঞ্চালন ব্যবস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশকে (পিজিসিবি)। আর পিজিসিবির বক্তব্য, বিতরণ সংস্থাগুলোর ত্রুটির কারণে গ্রাহককে মানসম্মত বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়েছে গত বছরের তুলনায়।

বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা ৯৩ লাখ টাকা। ইসিএ বা এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির অর্থায়নে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ২৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৯৩ লাখ, ইসিএ ১ হাজার ৮৩৭ কোটি ৯৬ লাখ এবং নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ৯৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ওপর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবার বাজেটে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৮ প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বর্তমান বাজেটের চেয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি বছর সংশোধিত বাজেটে ৪ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সেখানে আগামী অর্থ বছর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা।

দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রতিটির জন্য পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রিপেইড মিটার ছাড়াও চট্টগ্রামের উভয় জোনের সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এলাকার বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে পৃথক পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ থাকছে। তিন পার্বত্য জেলার বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণেও পিডিবিকে বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দেশের সব থেকে বড় বিতরণ সংস্থা। আরইবির বিতরণ সংস্থার এলাকায় সাতটি পৃথক প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্যও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরইবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার দুই কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকো বাজেটে ছয়টি করে পৃথক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেয়েছে। দুটি কোম্পানিই প্রিপেইড মিটার এবং ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে। এ ছাড়া ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ৪টি এবং নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ পেয়েছে।

জ্বালানি খাতে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ দেবে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৬২ লাখ, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে ২৬০ কোটি ২৯ লাখ এবং নিজস্ব খাত থেকে আরও ১ হাজার ৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

এবারের জ্বালানি খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রধানত গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা থেকে। বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ডের তিতাস গ্যাসক্ষেত্রসহ দেশের অনেকগুলো গ্যাসকূপের উৎপাদন কমে গেছে। এসব গ্যাসকূপের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২২টি ওয়েলহেড কমপ্রেসর কিনবে সরকারি সংস্থাগুলো। এ ছাড়া গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রস্তাবিত বরাদ্দ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (ভাইস চ্যান্সেলর) ও সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক সহকারী অধ্যাপক ম তামিম প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে বরাদ্দ দেওয়াটা ঠিক আছে। সঞ্চালন খাতের ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাস সেন্টার (এনএলডিসি) যেখান থেকে বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ করে সরবরাহ করা হয় তার অটোমেশন করতে হবে, দরকার স্মার্ট গ্রিড। এ ছাড়া গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন কমে গেছে। সারা বিশ্বেই কমে যাওয়া গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন ঠিক রাখতে কমপ্রেসর স্থাপন করা হয়।