'ব্ল্যাক মানি ম্যাটার্স'

ওয়ালি উল মারুফ মতিন
ওয়ালি উল মারুফ মতিন

করোনাকালে কর কমানোর বাজেট মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী ও অতি ধনীদের জন্য করুণার সুখবর। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর সম্প্রসারণ সরকারের আন্তরিকতারই প্রকাশ। তবে যে গুটিকয়েক বিষয় বিতর্কের প্রসঙ্গ হয়ে উঠেছে, তার একটি ‘সাদাটাকা–কালোটাকা। এ টালমাটাল জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও বিশ্বজনীন অস্থিরতার সময়ে আমরা কৌতুক করার মানসিকতায় নেই। তা সত্ত্বেও কালোটাকার কথায় প্রথমই মনে যে স্লোগানটি এসেছে তা হলো—‘ব্ল্যাক মানি ম্যাটার্স’। পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এখন ফুঁসে আছে। বাজেট বা করোনার মতো খবরের আগে আসছে কালো জীবনের খবর। ভবিষ্যতের জন্য যা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়, বরং বিপদসংকেত। আমাদের দেশের শেয়ারবাজারের নীতিনির্ধারকেরা প্রতিবছর বাজেটের আগে একটি প্রস্তাবনা বা দাবিনামা পেশ করেন। সরকার বাহাদূর যে দলেরই হোক না কেন, এসব প্রস্তাবনা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে। কারণ, শেয়ারবাজার ভালো বা চাঙা করার প্রতিশ্রুতি নেতারা সব সময়ই দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের তালিকায় বছর, সময় বা শাসক দলের প্রাথমিক নীতির তোয়াক্কা না করে যা থাকে, তার একটি হলো কালোটাকা শেয়ারবাজারে আসার অবাধ সুযোগ করে দেওয়া। কারণ, ব্ল্যাক মানি ম্যাটার্স। কালোটাকা যত কালোই হোক, তার মূল্য আছে।

তবে এ কথা সত্য, প্রথমত কালোটাকা আগমনে শুভেচ্ছা স্বাগতমের কোনো সম্মান নেই। দেশে–বিদেশে সত্যিকারের বিনিয়োগকারীদের এটি হাসায় আর ভয় দেখায়। দেশে যে কালোটাকা আছে, এ সংবাদটাই আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তির জন্য খারাপ। আমাদের মতো যারা সরকারকে ফিবছর ঠিকঠাক কর দিয়ে থাকে, তাদের জন্য এটি একটি চপেটাঘাত। যথাসময়ে আমি কর দেব ২৫ শতাংশ হারে। আর যিনি দেননি বা পরে দিলে এ করহার ১০ শতাংশ। হায় সেলুকাস!

কালোটাকার উৎস কাগজে–কলমে না থাকায় আমি আমার বক্তব্য প্রমাণ করতে পারব না, তবে এটুকু বলতে পারি, এগুলো চুরি–ডাকাতির টাকা। কিন্তু এ চুরি–ডাকাতির বিচার না করে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। স্বাধীনতার পর দেওয়া বেশ কয়েকবার কালোকে সাদা করার প্রস্তাব এলেও বাজারে এসেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ রংবদলের প্রস্তাব খুব বেশি উৎসাহিত করেনি কালোটাকার মালিকদের।

কালোটাকাকে সাদা করা সুযোগ শেয়ারবাজারে দেওয়া হলেও তা বাজারের কোনোই উন্নতি হবে না।

শেয়ারবাজারের জন্য দরকার দৃশ্যমান সেতু, মেট্রোর মতো শক্তিশালী অবকাঠামো। যেগুলো আমাদের বন্ড মার্কেট চালু করবে। ডেরিভেটিবস নিয়ে আসবে। কৃষককে বাজার অর্থনীতির আওতায় আনতে এমন দৃশ্যমান অবকাঠামো দরকার। আমরা বাঙালিরা দেশের জন্য রক্ত দিতে পারি, কিন্তু কর দিতে রাজি নই। কর ফাঁকি দেওয়া অর্থ বিতরণ করুন। তাতে শুধু শেয়ারবাজার নয়, দেশ ও দশের উপকার হবে।

 ওয়ালি উল মারুফ মতিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মসলিন ক্যাপিটাল