গাড়ির পেছনে খরচ ৫০% বাড়ল

বাজেটে গাড়ির মালিকদের করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এতে কম দামি গাড়ির মালিকের খরচ অন্তত ১১ হাজার টাকা বাড়ল।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ সোহেল রানা ছোটখাটো ব্যবসা করেন। পরিবার নিয়ে বাস করেন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে। সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়া এবং নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য বছর দুয়েক আগে একটি ১৫০০ সিসির রিকন্ডিশন্ড টয়োটা গাড়ি কিনেছিলেন। এতে ভালোই চলছিল পরিবারটির। নতুন বাজেট ঘোষণার পর সোহেল রানার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

কারণ, আগে গাড়িটির জন্য জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, গাড়িচালকের বেতন ছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মাধ্যমে প্রতিবছর অগ্রিম কর ১৫ হাজার টাকা, ট্যাক্স টোকেন নবায়ন ফি ৫ হাজার ৮০২ টাকা, ফিটনেস সনদ নবায়ন ফি ১০৮৭ টাকা মিলিয়ে ২১ হাজার ৯৮৯ টাকা খরচ করতে হতো। কিন্তু বাজেটে অগ্রিম কর আরও ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং বিআরটিএর বিভিন্ন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার ফলে বাড়তি গুণতে হবে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বছরে খরচ দাঁড়াবে ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ খরচ বাড়ল ৫০ শতাংশ। সোহেল রানার মতো দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির গাড়ির মালিকেরা বিপাকে পড়েছেন। অবশ্য অগ্রিম কর হিসেবে দেওয়া টাকা বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমার সমন্বয় করা যায়।

এই বিষয়ে সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় গাড়ির জন্য বাড়তি ১১ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। একদিকে আয় কমেছে, অন্যদিকে খরচ বেড়েছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের কথা চিন্তা করে এই কর কমানো উচিত।’

কর কত বাড়ল

অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের গাড়িমালিকদেরই কর বাড়িয়েছেন। এর মধ্যে ১৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ওপর কর ১৫ হাজার থেকে ১০ হাজার বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশে যত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহৃত হয়, এর প্রায় ৮০ শতাংশই ১৫০০ সিসির কম বলে গাড়ি বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে।

১৫০০ সিসির বেশি কিন্তু ২০০০ সিসির কম, এমন প্রাইভেট কার ও জিপ গাড়িতে কর ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০০০ সিসি থেকে ২৫০০ সিসির কম গাড়ির কর এখন ৭৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২৫০০ থেকে ৩০০০ সিসির কম পর্যন্ত এবং ৩০০০ সিসি থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির জন্য বাড়ানো হয়েছে ২৫ হাজার টাকা করে। এই দুটি শ্রেণিতে করের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৩৫০০ সিসির বেশি এমন সব বিলাসবহুল গাড়ির ওপর বার্ষিক কর ৭৫ হাজার টাকা বেড়ে ২ লাখ টাকা হয়েছে।

যাঁরা নতুন গাড়ি কিনবেন, তাঁদের খরচও বাড়ল। কারণ, বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

গাড়ি বেচাকেনা কমতে পারে

সবচেয়ে কম দামি গাড়ি থাকলেও বছরে ৩৩ হাজার টাকার মতো খরচ করতে হবে, এমন বিবেচনায় গাড়ি কেনার ঝোঁক কমতে পারে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, কর বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির গাড়ির মালিকদের ওপর চাপ বেড়েছে। এমনিতেই করোনায় তাঁদের আয় কমেছে। যাঁরা কম দামে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার চিন্তা করছেন, তাঁরাও পিছিয়ে যাবেন। সরকারের উচিত কর কমিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে একটু স্বস্তি দেওয়া।

দামে কম হওয়ায় চাকরিজীবীসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু এবারের বাজেট মধ্যবিত্তের সেই স্বপ্নে হানা দিল।

বারভিডা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে গাড়ির বাজারে ৮৫ শতাংশ রিকন্ডিশন্ড, বাকিগুলো নতুন গাড়ি। দেশে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩২ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩ হাজার এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ১০ হাজার রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে।