বেসরকারি ব্যাংকে বেতন কমানো নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত এমডিরা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস ও সুদহার কমানোর কারণে চাপে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ক্ষতি কমাতে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা কর্মীদের বেতন কমাচ্ছে, পাশাপাশি অন্য খরচও কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে এখনই বেতন কমানো নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডিরা)।

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে সর্বাধিক আলোচনার বিষয়—কর্মী ছাঁটাই ও বেতন কমানো। বেশির ভাগ ব্যাংকের এমডি বেতন কমানোর পক্ষে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বেতন না কমিয়ে, ছাঁটাই করে অন্যান্য অনেক খরচ কমিয়েও ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব। বেসরকারি এবি, দি সিটি, এক্সিম ব্যাংক আগেই কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। গত সপ্তাহে নতুন করে কমিয়েছে আল-আরাফাহ ব্যাংক। এসব ব্যাংক কর্মীদের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমিয়েছে।

একাধিক ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, মানবিক কারণে এ অবস্থায় ছাঁটাই না করে বেতন কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা চলছে। কারণ, ব্যাংক লোকসানে গেলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা, শেয়ারবাজার সবখানে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার কয়েকজন ব্যাংকার বলছেন, খরচ কমানোর আরও অনেক পথ আছে। ব্যাংকের শাখার ভাড়া, স্টেশনারি ও অন্যান্য খরচ কমিয়ে খরচ অনেক কমানো সম্ভব। করোনার এ দুঃসময়ে ব্যাংকারদের মনোবল ভেঙে দিলে সামনে ব্যাংক চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।

এদিকে বেতন না কমাতে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সরাসরি কোনো নির্দেশনা না দিলেও ব্যাংকারদের উজ্জীবিত রাখতে বলেছে।

>

কর্মী ছাঁটাই না করে বেতন কমানোর পথে হাঁটছে কিছু ব্যাংক। অন্যরা বলছেন, খরচ কমানোর আরও অনেক পথ আছে।

জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, বেতন-ভাতা কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনই নয়। যদি এ ব্যাপারে কিছু করতেই হয়, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পুরো বছর পার হওয়া পর্যন্ত।

তবে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘আয়ের অনুপাতে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, এ কারণেই বেতন কমানোর মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে এর মধ্যেও আমরা কর্মীদের বিমা সুবিধা, গাড়ি ও বাড়ির ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছি। এ বছর বোনাস, বেতন বৃদ্ধি সবই হয়েছে।’

ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আমানতকারীদের সুদ পরিশোধের পর সবচেয়ে বেশি খরচ বেতন-ভাতায়। এরপর ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলে। এরপরই খরচের বড় খাত স্টেশনারি, প্রিন্টিংয়ে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে নিরাপত্তা সঞ্চিতি, তার পরিমাণ কোনো কোনো ব্যাংকের বেতন-ভাতার চেয়ে বেশি।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখনই বেতন কমানো কোনো সমাধান না। আমরা ভাড়া কমিয়ে ও ভাড়া নেওয়া ভবন ছেড়ে দিয়ে খরচ কমিয়ে আনছি। খরচ কমানোর আরও অনেক পথ আছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো গেলে তাতে খরচ এমনিতেই কমে আসবে।’

প্রাইম ব্যাংকের এমডি রাহেল আহমেদ বলেন, ‘কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাক এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের পরিচালনা পর্ষদ এখনই নিতে চায় না। প্রতিটি ব্যাংকের খরচের ধরন ভিন্ন ভিন্ন, তাই ব্যাংকভেদে সিদ্ধান্তও ভিন্ন হবে।’

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারওয়ারও মনে করেন, কর্মীদের বেতন কমানো খরচ কমানোর একমাত্র পথ নয়।

ব্যাংকাররা বলছেন, গত এপ্রিল থেকে ঋণ–আমানতের সুদ হার ৯ ও ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কারণে ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর আঘাত এসেছে। সুদ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। আবার করোনার কারণে ঋণ আদায় একরকম বন্ধ, আমানতও কমছে। কমিশন আয়ও কমে গেছে। এ কারণে চাপে রয়েছে ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকাররা এটাও বলছেন, খেলাপি ঋণ, পরিচালকদের নামে–বেনামে নেওয়া ঋণ আদায় ও পরিচালকদের বিভিন্ন ধরনের অবৈধ সুবিধা বন্ধ করা গেলে ব্যাংকগুলো কিছুটা চাপমুক্ত হবে। তখন কর্মী ছাঁটাই বা বেতন কমানোর পথে হাঁটতে হবে না।