মোটরসাইকেল খাতে গভীর সংকটের আশঙ্কা

মোটরসাইকেল খাতের কোনো দাবিই এবারের বাজেটে পূরণ করেনি সরকার, বরং এই বেশ কিছু সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে, যা খাতটিকে গভীর সংকটে ফেলবে বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তারা।

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি খাতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি সুবিধা ও কর অবকাশ রাখা হলেও মোটরসাইকেল খাত থেকে সুবিধাটা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে মোটরসাইকেলের দাম বাড়তে পারে।

উদ্যোক্তারা বলেন, বিযুক্ত অবস্থায় (সিকেডি) মোটরসাইকেল আমদানিতে এমন শর্ত এসে গেছে, যাতে বড় বিপাকে পড়বে বেশির ভাগ বড় ব্র্যান্ড। কারণ, কারও পক্ষেই সব মডেলের মোটরসাইকেল দেশে তৈরি করা সম্ভব নয়।

বাজেটের আগে মোটরসাইকেলের কিছু যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর কমানোর আশ্বাস পেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। নিবন্ধন খরচ কমানো হয়নি।

জানতে চাইলে টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘আমরা খুব খারাপ অবস্থায় পড়েছি। বুঝতে পারছি না, পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে।’

দেশে মোটরসাইকেল তৈরিতে গত কয়েক বছরে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি জাপানি ও ভারতীয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের কিছু মডেল দেশে তৈরি হয়। কিছু মডেল সংযোজিত হয়।

মোটরসাইকেলের দাম কমছিল। বাজারও লাফিয়ে লাফিয়ে বড় হচ্ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা তিন বছর আগেও দেড় লাখ ইউনিট ছিল। মোটরসাইকেল খাতের দুই সংগঠন বিএমএএমএ ও মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমএমইএবি) হিসাব অনুযায়ী, এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

উদ্যোক্তারা বলেন, বিনিয়োগের বিপরীতে যখন মুনাফা আসার সময়, তখনই করোনার কারণে বিক্রিতে ধস নামল। এখন বাজেটটাও কঠিন করল।

ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছে এমএমইএবি। জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য সুপারিশ করেছে। অন্যদিকে বিএমএএমএ অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়ে তাদের উদ্বেগ ও প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

জাপানি ও ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বড় দুশ্চিন্তা সিকেডিতে বিধিনিষেধ। এত দিন ব্র্যান্ডগুলো মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ রং করা অবস্থায় আমদানির সুযোগ পেত। নতুন বাজেটে এ সুবিধা আর রাখা হয়নি। এর মানে হলো, দেশে রং করার কারখানা করতে হবে।

কারখানা করা নিয়ে কোম্পানিগুলোর দ্বিমত নেই। তবে তারা দুটি যুক্তি তুলে ধরছে। এক. এ জন্য দুই বছর সময় দরকার। দুই. নতুন মডেল বাজারে ছেড়ে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য সিকেডিতে ছাড় থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমরা দেশেই রং করার কারখানা করব। সে জন্য এক থেকে দুই বছর সময় দেওয়া হোক।’ তিনি জানান, এক ব্র্যান্ডের একটি মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদন করলে অন্য মডেলগুলোতে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেত। এ সুবিধা না থাকার কারণে সমস্যা বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সুব্রত রঞ্জন দাস আরও বলেন, মোটরসাইকেল খাত তরুণদের কর্মসংস্থানের বড় উৎস হবে। দেশে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য খাতে জাপানি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সরকারের আশ্বাস বাস্তবায়ন করতে হবে। নীতির চটজলদি পরিবর্তন করা যাবে না।