ছোট ঋণে নিশ্চয়তা দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কুটির, মাইক্রো, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) ঋণের জন্য গ্যারান্টি স্কিম বা নিশ্চয়তা কর্মসূচি চালু হচ্ছে। এই খাতে ঋণ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিশ্চয়তার কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ঋণ আদায় না হলে ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতেও ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির।

এ স্কিম গঠনের জন্য ২৫০ কোটি টাকা চেয়ে ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০ কোটি ডলার সহায়তা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার টাকা না দিলে আপাতত নিজেদের অর্থেই এ স্কিম গঠন করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের গ্যারান্টি স্কিম চালু রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই এই স্কিম চালুর আশা করছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য প্রান্তিক পর্যায়ে ও ছোট গ্রহীতাদের কাছে ঋণ পৌঁছে দেওয়া।’

এই খাতের ঋণে শীর্ষ ব্যাংকগুলোর একটি সাউথ ইস্ট ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই স্কিম ব্যাংকগুলোর জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অনেকটা নিরাপদ বোধ করবে, যা দেশের এসএমই খাতকে এগিয়ে নেবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের উদ্যোগ খুবই জরুরি।

জানা গেছে, এ স্কিমের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে ঋণের বিপরীতে ২ শতাংশ এ স্কিমে জমা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলো তাতে রাজি হয়নি। ব্যাংকগুলো ঋণের বিপরীতে দশমিক ৫০ শতাংশ হারে গ্রাহক থেকে আদায় করার প্রস্তাব দেয়। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক খসড়া নীতিমালা সংশোধন করে তা চূড়ান্ত করার কাজ করছে।

 করোনাভাইরাসের কারণে ছোট-বড় সব ব্যবসায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি মোকাবিলায় সিএমএসএমই খাতের প্রতিষ্ঠানকে চলতি মূলধন জোগান দিতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। প্যাকেজের আওতায় ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে গ্রাহককে দিতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ সরকার পরিশোধ করবে।

>

স্কিম গঠনে ২৫০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
আবার বিশ্বব্যাংকের ৩০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েও আলোচনা চলছে
সিএমএসএমই খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ বাড়বে
ঋণ আদায় না হলে তার ক্ষতিপূরণ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতেও ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে

এদিকে, ব্যাংকগুলো যাতে এ খাতে ঋণ দিতে গিয়ে তারল্যসংকটে না পড়ে তাই এ খাতের জন্য এরই মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃ অর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার পর এ তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণের অর্ধেক অর্থ নিতে পারবে। এরপরও ব্যাংকগুলো সিএমএসএমই খাতে ঋণ দিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। গত মে মাসে মাত্র ৫টি ব্যাংক প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। আর পুনঃ অর্থায়ন পেতে আবেদন করেছে শুধু সিটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো যাতে এই খাতে ঋণ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, এ জন্য দ্রুত গ্যারান্টি স্কিম চালু করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকাররা বলছেন, ৯ শতাংশ সুদে শহরে ঋণ দেওয়া গেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্ভব না। এ জন্য ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এই ঋণ গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় সিএমএসএমই খাতের নতুন ঋণের একটা নির্দিষ্ট অংশ গ্যারান্টি দেওয়া হবে। ব্যাংকভেদে এই গ্যারান্টির অংশের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। এই ঋণ আদায় না হলে তার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পাবে ব্যাংক। এ ছাড়া ঋণের যে পরিমাণ স্কিমের আওতায় নিশ্চয়তা পাবে, তার বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ নানা ছাড় দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত অতি ক্ষুদ্র ও ছোট ঋণগ্রহীতাদের ঋণে শতভাগ ও অন্যান্য ঋণে আংশিক নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ শতাংশ সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় এ খাতের ছোটদের ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ব্যাংকগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক ঋণ নিশ্চয়তা কর্মসূচি চালু করে, তাহলে ঋণ কিছুটা বাড়তে পারে। সব দেশেই এমন কর্মসূচি আছে।