করোনা প্রতিরোধে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি বাজেটের উপেক্ষিত উপখাত: হোসেন জিল্লুর রহমান

হোসেন জিল্লুর রহমান
হোসেন জিল্লুর রহমান

পানি ও সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়াকে করোনা প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এমন স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) খাতে ২০২০–২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ একেবারেই কম। এটি এখনও বাজেটের উপেক্ষিতি উপখাত হয়ে রয়েছে।

কথাগুলো বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি আজ রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, ডব্লিউএসএসসিসি-বি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতে বাজেটের বরাদ্দের বিষয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরতেই ছিল আজকের আয়োজন। আজ ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসেপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর। তিনি বলেন, এখনো নীতি নির্ধারকেরা কোভিড–১৯ কে একটি সাধারণ সমস্যা বলে মনে করছেন বলে মনে হয়। এটি যে একটি ভয়ানক মহামারি, সেই উপলদ্ধি এখনো আসেনি। বাজেটর দুটি দিক। একটি হলো বরাদ্দ অন্যদি দিকনির্দেশনা। এ দুইয়ে মিলে একটি নীতি নথিতে (পলিসি ডকুমেন্ট) পরিণত হয় বাজেট। কিন্তু সেই দিকনির্দেশনার দিকটি উপেক্ষিত।

হোসেন জিল্লুর বলেন, ওয়াশ খাতে বরাদ্দ গত বছর বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৭৯৬ কোটি । প্রস্তাবিত বাজেটে তা বেড়ে ১২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যবিধি খাতকে কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও লক্ষণীয়। প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেটে স্বাস্থ্যবিধি ৎউপ-খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারও এ খাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শহরকেন্দ্রিকতার বিষয়টি অপরিবর্তিত রয়েছে।

হোসেন জিল্লুর বলেন, ওয়াশ খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিশাল ব্যবধান এবারের বাজেটেও রয়ে গেছে। এ খাতে মোট বরাদ্দের৮৭ ভাগই গেছে শহরে। গ্রামে বাকি ১৩ শতাংশ। শুধু গ্রাম ও শহরের মধ্যে না। চার ওয়াসার মধ্যে এবং সিটি করপোরশনগুলোর মধ্যেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে চরম অসাম্য দেখা গেছে। খুলনা ওয়াসা ধারাবাহিকভাবে এবারও বঞ্চিত। দেশের দ্বিতীয় রাজধানী বলে উল্লেখ করা হলেও চট্টগ্রামও বরাদ্দ আশানুরূপ পায়নি। আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় দ্বিগুণ বরাদ্দ পেয়েছে।

হোসেন জিল্লুর বলেন, 'বরাদ্দের ক্ষেত্রে নীতির চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাবই বড় ভূমিকা রেখেছে।'

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, কোভিড–১৯ এর সঙ্গে লড়াইয়ে আগামীতে ওয়াশ খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এ জন্য জনসচেতনতায় বৃদ্ধি জরুরি। আর জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারের বিকল্প নেই।

হোসেন জিল্লুর বলেন, মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার বাড়ানো, টিকা দান সম্প্রসারন, জন্মনিয়ন্ত্রণ—ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন যথেষ্ট। আর এসব সম্ভব হয়েছে সরকারি–বেসরকারি তৎপরতায়। সেখানে সচেতনতামূলক প্রচার ছিল বড় হাতিয়ার। স্বাস্থ্যবিধির সম্প্রসারণে বহুমাত্রিক প্রচারকে গুরুত্ব দিতে হবে সবচেয়ে বেশি। আর এ কাজে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনকে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

কোভিড–১৯ মোকাবিলয়া স্বাস্থ্যবিধির সম্প্রসারনে যেসব প্রচার চলছে তা কি সর্বসাধারণের জন্য তৈরি হচ্ছে? এমন প্রশ্ন রাখেন আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটার এইডের বাংলাদেশিয়

প্রধান হাসীন জাহান। তিনি বলেন, কোভিড–১৯ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপণে সরবরাহের পানিতে হাত ধোয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ সরবরাহের পানি পায়। যে মানুষ এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত তার কাছে এই বার্তা কতটুকু যৌক্তিক হবে। হাসীন জাহান বলেন, সাবান কোম্পানির হাতে সচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে রাখা ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা শহর ও বস্তি এলাকাগুলোতে হাত ধোয়ার স্থাপনা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দরিদ্র জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুবিধা দেবে।'

সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সংগঠন সিমাভির কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর অলোক মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগে প্রচারের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। কারণ অবকাঠামো বা দৃশ্যমান কিছু নির্মাণের বিষয়েই আগ্রহ বেশি দেখা যায়।

ইউনিসেফের ওয়াশ বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মনিরুল আলম বলেন, শুধু প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না, কল্যাণমূলক অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে। আর কোভিড–১৯ সেই বাস্তবতার শিক্ষা আমাদের দিল।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেসরকারি সংগঠন ডরপের গবেষণা পরিচালক জোবায়ের হোসেন।