ঘুরছে না ঘোড়ার গাড়ির চাকা, রেস্তোরাঁ-দোকান ফাঁকা

প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে কারুপণ্য ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা। ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শনিবার রাজশাহী নগরের নিউমার্কেটে।  শহীদুল ইসলাম
প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে কারুপণ্য ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা। ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। শনিবার রাজশাহী নগরের নিউমার্কেটে। শহীদুল ইসলাম

দোকানের নাম কারু বিতান। ভেতরে মনকাড়া সব কারুপণ্য থরে থরে সাজানো, কিন্তু বিক্রয়কর্মী নেই। বৈদ্যুতিক পাখাও বন্ধ। দেয়ালে এসি লাগানো আছে, চালু নেই। দোকানের বাইরে একজন পায়চারি করছিলেন। তিনি ভেতরে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। মানে, কিছু লাগবে কি না। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বললেন, ‘এসব মালের আর খদ্দের নেই। মানুষের হাতে বাড়তি পয়সা থাকলে, অনুষ্ঠানাদি হলে এসব আইটেম বিক্রি হয়। এখন বেচাকেনা নেই। তাই ভেতরে বসে থেকে বিদ্যুৎ খরচ না করে বাইরে পায়চারি করছি।’

এই দোকানির নাম বিকাশ কুমার দাস। রাজশাহী নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তাঁর দোকান। ২৫ জুন দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। বললেন, আগে মাসে অন্তত এক লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন কোনো দিন একজন খদ্দের আসেন, কোনো দিন আসেনও না। একটা পণ্য বিক্রি হলে সেই টাকা দিয়ে চাল কিনে বাড়ি যাচ্ছেন। এভাবে প্রতিদিনই ঘর থেকে যে পণ্যটা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, সেটা আর নতুন করে দোকানে তুলতে পারছেন না। লকডাউনের পর থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দোকানভাড়া ও ৪ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া বাকি পড়েছে। তিনটি এনজিও থেকে ঋণ করেছিলেন। মাসিক কিস্তি ৩৫ হাজার টাকা। আপাতত দোকানভাড়া ও কিস্তি দিতে হচ্ছে না। কিন্তু এগুলোর পরিমাণ তো বাড়ছেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই একবারে চাইবেন। তখন কী করবেন, ওপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।

নিচতলায় এই পণ্যের একটি বড় দোকান রয়েছে। নাম মেসার্স কারুশিল্প। বাইরে একজন কর্মচারী টুল নিয়ে বসে আছেন। ভেতর থেকে একজন বৃদ্ধা বের হলেন। ভেতরে ঢুকেই দোকানমালিক জয়দেব শিকদারকে পাওয়া গেল। জানতে চাইলাম, ওই নারী কিছু কিনতে এসেছিলেন কি না। মালিক শুকনা গলায় উত্তর দিলেন, ‘না ভাই, উনি ভিক্ষা চাইতে এসেছিলেন। আরেকটু যোগ করে বললেন, এ রকম পোশাক-আশাক নিয়ে কেউ এসব দোকানে কিছু কিনতে ঢোকে না।’ বেচাকেনার কথা তুলতেই তিনি বলেন, কিসের বেচাকেনা! দোকানে চারজন কর্মচারী ছিলেন, তিনজনকে অব্যাহতি দিতে হয়েছে। এখন একজন আছেন। খদ্দের নেই। তাই বাইরে বসে রয়েছেন। কর্মচারীর বেতন মাসে ৯ হাজার টাকা, দোকানভাড়া ১৮ হাজার টাকা, নিজের বাড়িভাড়া ৮ হাজার টাকা। এখন বেচাকেনা করে দোকানভাড়াই তুলতে পারছেন না। আগে মাসে তিন থেকে চার লাখ টাকা বেচাকেনা হতো। এখন পুঁজি ভেঙে খাওয়া শুরু করেছেন তিনি। একটা বিমা করা ছিল, সেটাও ভেঙেছেন।

নিউ কারুবিপণি এই মার্কেটের বড় দোকান। দুজন কর্মচারী বাইরে বসে গল্প করছিলেন। মালিক সুশান্ত রায় বললেন, ‘আমি নিজের বাড়িতে থাকি। ভাড়া দেওয়া লাগে না। সারা দিনে দোকানে দু-একটা আইটেম যা-ই বিক্রি হয়, তিনজনে মিলে ভাগ করে নিই। একজন কর্মচারী বললেন, ‘দাদা, এভাবে বাঁচা যায় না। সকালবেলা বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিই। কিছু আয় হয়। এভাবে বেঁচে আছি।’

রাজশাহী নিউমার্কেটে কারুপণ্যের এ রকম ছয়টি দোকান আছে। সব কটিরই একই অবস্থা। ঘণ্টাখানেক অবস্থানকালে দুজন নারীকে শুধু একটির এক দরজা দিয়ে ঢুকে আরেক দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। অথচ এই দোকানগুলোতে আগে সারা দিন ভিড় লেগে থাকত।

ভ্রমণতরিগুলো ঘাটে বাঁধা

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ভ্রমণপিয়াসীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন বিকেলে, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা একটি করে নৌকা নিয়ে নদীতে ভেসে বেড়ায়। বিকেলবেলার পদ্মা নদী যেন ছবি হয়ে যায়। সেই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। গত সাড়ে তিন মাস আগে যে নদীর ঘাট ছিল অলিখিত একটি বিনোদনকেন্দ্র, এখন সেটি ফাঁকা।

রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ নম্বর গ্রোয়েনের (টি বাঁধ) পাশে এসব ভ্রমণতরি বাঁধা থাকে। আর মাঝিরা বাঁধের ওপর পায়চারি করে অনবরত যাত্রী হাঁকতে থাকেন। ২৫ জুন বিকেলে সেখানে গিয়ে সেই চিরচেনা কোলাহল দেখা গেল না। ঘাটে সার করে ২৫টি নৌকা বাঁধা। নৌকার রঙিন বেঞ্চগুলো নদীর ঘাটে তুলে রাখা হয়েছে। বেঞ্চগুলোকে ছাপিয়ে নতুন ঘাস গজিয়ে উঠেছে। ঘাস দেখে শ্রীরামপুর বস্তির একজন গৃহবধূ বেঞ্চের সঙ্গে ছাগল বেঁধে দিয়েছেন। নৌকার ইঞ্জিনগুলো খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে মরচে ধরে গেছে।

সাড়ে তিন মাস ধরে নৌকাগুলো ঘাটে বাঁধা। সেখানে রাজু আহমেদ (৪০) নামের এক মাঝি দাঁড়ানো। বললেন, আগে প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন। এখন জমানো টাকাও শেষ। সরকারি-বেসরকারি লোকজন যে সাহায্য দিচ্ছেন, তা-ই খেয়ে বেঁচে আছেন।

পরিচিত মাঝি মনিরের খোঁজ করতেই বাঁধের ওপরই রাজু একজন নারীকে দেখিয়ে দিলেন। তিনি মনিরের মা মরিয়ম। মনির কোথায় জানতে চাইলে বললেন, নৌকা তো আর চলে না, সংসারও চলে না। বাধ্য হয়ে মনির পদ্মা নদীতে জেলেদের জাল টানতে গেছেন। ৫০-১০০ যা-ই দেয়, তাতেই কোনোরকমে বেঁচে আছেন। কথা বলতে বলতেই মনির এসে বায়না ধরলেন, বাসায় যেতে হবে। মনিরের নৌকায় করে প্রায়ই পদ্মা নদীর ওপারে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালায় যাওয়া হয়। সেই থেকে পরিচয়। বস্তির বাসা হলেও টেলিভিশন, ওয়ার্ডরোবসহ আধুনিক আসবাব সবই আছে। মনিরের বয়স প্রায় ১৮। মনির বললেন, ঈদ গেল, নববর্ষ গেল, কোনো আয় করতে পারেননি। আগে এসব দিনের সাত দিন আগে থেকে রমরমা ব্যবসা হতো। তাঁর নৌকার প্রায় ৯০ শতাংশ যাত্রীই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখন তারা আর আসে না।

ঘুরছে না চটপটির গাড়ির চাকা

মারুফ স্পেশাল চটপটি ও ফুচকা, পদ্মা চটপটি ও ফুচকা, রাজশাহী মামা হালিম অ্যান্ড চটপটি, পদ্মা স্পেশাল চটপটি ও ফুচকা, ভাই ভাই মিনি ফাস্ট ফুড, মামা চায়নিজ, পদ্মার ধার স্পেশাল চটপটি ও ফুচকা—আরও কত কী যে নাম এই চটপটির গাড়িগুলোর। রাজশাহী নগরে এ রকম কয়েক শ গাড়ি আছে। এরা সাধারণত চটপটি, ফুচকা, নুডলস, শরবত, ঝালমুড়ি, পানি, পেয়ারা ইত্যাদি বিক্রি করে। করোনাকালে এই গাড়িগুলোর চাকা ঘুরছে না। অনেকগুলো গাড়ি পদ্মা নদীর ধারে টি বাঁধের পাশে সার করে রেখে গেছেন মালিকেরা। নৌকার বেঞ্চগুলোর মতোই এই গাড়িগুলোর চাকা ছাপিয়ে ঘাস গজিয়ে উঠেছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মরচে ধরে গেছে চাকার রিংয়ে। নৌকার অবস্থা দেখতে গিয়েই চটপটির গাড়ির সারিগুলোতে চোখ আটকে গেল। শ্রীরামপুর বটতলার দিক থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে মামা চায়নিজ নামের একটি চটপটির গাড়ি আসতে দেখা গেল। মালিক একরামুল হক (৪০) গাড়ি টেনে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। একটু থামিয়ে তাঁর কাছ থেকে বেচাকেনার একটা হিসাব পাওয়া গেল। জানা গেল, করোনার আগে প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। শুধু পদ্মার ধারেই এমন ১০০ গাড়ি রয়েছে। বোঝা গেল, প্রতিদিন এই চটপটিওয়ালারাই অন্তত তিন লাখ টাকা আয় করেছেন। এখন কী অবস্থা জানতে চাইলে একরামুল হক বললেন, এখন তো মানুষ বাইরেই আসছেন না। কেউ এলেও বাইরের খাবার খাচ্ছেন না। অনেক দিন বসে থাকার পর বের হয়েছিলেন। কোনোরকমে ১৪০ টাকার বিক্রি করেছেন। এতে খাবার তৈরির খরচই উঠল না। তাই ভাবছেন বের হয়ে ভুল করেছেন।

লকডাউনের পর থেকে বন্ধ নাজিম উদ্দিনের ঘোড়ার গাড়ি। খুবই অর্থকষ্টে এখন ঘোড়ার খাবারের টাকাও সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি। গতকাল রাজশাহীর তালাইমারি বালুঘাট এলাকায়।  প্রথম আলো
লকডাউনের পর থেকে বন্ধ নাজিম উদ্দিনের ঘোড়ার গাড়ি। খুবই অর্থকষ্টে এখন ঘোড়ার খাবারের টাকাও সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি। গতকাল রাজশাহীর তালাইমারি বালুঘাট এলাকায়। প্রথম আলো

এখন ঘোড়া বাঁচানোই দায়

রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী যানবাহন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এই ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য নগরের একটি চত্বরের নাম দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্য চত্বর। সেখানে ঘোড়ার গাড়ির একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে আধুনিক যানবাহনের ভিড়ে ঘোড়ার গাড়ি প্রায় হারিয়েই গেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি ঘোড়ার গাড়ি শহরের চলাচল করে। বিয়ের অনুষ্ঠান, কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শোভাযাত্রা, শখের বেড়ানো—এসব কাজে ঘোড়ার গাড়ির ডাক পড়ে। নগরের কুমারপাড়া ও সাহেব বাজারের মাঝখানে পিএন সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের রাস্তায় প্রতিদিন সকালে ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সেখান থেকে ভাড়া নিয়ে তারা বিভিন্ন এলাকায় যায়। গত তিন মাসে এক দিন শুধু একটি ঘোড়ার গাড়ি কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ানো দেখা গিয়েছিল। পরে আর দেখা যায়নি।

একটি গাড়ি আছে দুই ঘোড়ার। দেখতে অনেকটা পালঙ্কের মতো। বেশ উঁচু। গাড়িটি শহরের সবার নজর কাড়ে। এই গাড়ির মালিকের নাম নাজিম উদ্দীন। তাঁর বাড়ি নগরের তালাইমারী বালুরঘাট এলাকায়। কয়েক দিন আগে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি গাড়ি খুলে রেখে দিয়েছেন। কী অবস্থা জানতে চাইতেই বললেন, এখন ঘোড়া বাঁচানোই দায় হয়ে গেছে। প্রতিদিন তাঁর দুটি ঘোড়া ৫০০ টাকার খাবার খেত। এখন ২০০ টাকার খাবারও দিতে পারছেন না। সারা দিন ঘুরে ঘুরে ঘাস কেটে নিয়ে এসে ঘোড়া দুটোকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। নাজিম উদ্দীন বলেন, ঘোড়ার গাড়ি তাঁর তিন পুরুষের পেশা। তিন বছর আগে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করে তিনি দুই ঘোড়ার গাড়িটি বানিয়েছেন। ঘোড়া দুটোর দাম পড়েছে ৮০ হাজার টাকা। এই গাড়ি থেকে তাঁর ভালো আয় হতো। একটু দূরের ভাড়ায় গেলে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। আশপাশে গেলে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া পেতেন। শহরে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান লেগেই থাকত। তাঁর ডাক পড়ত ভালোই। এখন সব বন্ধ।

ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা বেকার

রাজশাহী শহরের ডেকোরেশনের একটি বড় প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ডেকোরেটর অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। এর স্বত্বাধিকারী মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায় তাঁর দুই কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে। ৪০ জন কর্মচারী। করোনার সময়ে নিজের উদ্বৃত্ত আয় থেকে কর্মচারীদের তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। আর দিতে পারছেন না। সিটি করপোরেশনের কাছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার একটা বিল পড়ে আছে। তিনি বলেন, ‘কী দিন যাচ্ছে, এটা বোঝাতে পারব না। চার মাস ধরে দোকান বন্ধ। এখন প্রতি মাসে ৬৫ হাজার টাকা গুদামভাড়া দিতে হচ্ছে, পিকআপের চালক ও তাঁর সহকারীর বেতন ২২ হাজার টাকা, ব্যবস্থাপকের বেতন ১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আর সংসার খরচ তো আছেই।’

শহরের মাঝারি গোছের প্রতিষ্ঠান জুয়েল ডেকোরেশন। এর স্বত্বাধিকারীর নাম মোহাম্মদ রাজু। এই ব্যবসায় তাঁর বিনিয়োগ প্রায় ৩০ লাখ টাকা। তার হিসাবে শহরে ছোট-বড় প্রায় ১০০টি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাঁরা কাজ পান। এখন তাঁরা একেবারেই বসা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াকিল খান পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বছর আগে বরেন্দ্র ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামের ছোট একটি প্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলেছিলেন। প্রথম দিকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটখাটো অনুষ্ঠান ও বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। ওয়াকিল বললেন, গত ডিসেম্বরে তাঁর পড়াশোনা শেষ হয়। ব্যবসার সম্ভাবনা দেখে তিনি প্রতিষ্ঠানে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অ্যালামনাইয়ের আয়োজন করেছেন। তারপরই লকডাউনে পড়েছেন। ব্যবসার শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খেলেন।

বিপদে রেস্তোরাঁগুলো

রাজশাহী নগরের দুটি বড় রেস্তোরাঁর মালিক শিহাব উদ্দিন। তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠানের ঘরভাড়াই প্রায় আড়াই লাখ টাকা। দোকানের কর্মচারীদের বেতন তিন থেকে চার লাখ টাকা। সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ বিল। শিহাব উদ্দিন বলেন, কর্মচারী ছাঁটাই করে সীমিত আকারে প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছেন। তাতে বিদ্যুৎ বিল আর কর্মচারীর বেতনটাই কোনোরকমে উঠবে। এভাবে তো চালানো যাবে না। ২৭ জুন দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সে সময় রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির একটা বৈঠক শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। সমিতির সভাপতি রিয়াজ আহমদ খান সেই সভা থেকেই প্রথম আলোকে বললেন, শহরে তাঁদের নিবন্ধিত রেস্তোরাঁ আছে ১২৮টি। প্রতিদিন এসব রেস্তোরাঁ থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন হতো। এই নগদ প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার সময়ে ভয়ে মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন কম। তাঁরা বাইরের খাবার খেতেও ভয় পাচ্ছেন। এ অবস্থায় রেস্তোরাঁমালিকেরা কী করবেন, কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না।