তরুণ অর্থনীতিবিদদের বাজেট ভাবনা

>

করোনাকালের অর্থনীতি, নতুন অর্থবছরে বাজেট এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বাজেটে পরিবর্তন এবং অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। দেশের তরুণ অর্থনীতিবিদেরা এসব নিয়ে কী ভাবছেন, তা জানার চেষ্টা করেছি আমরা। সাত তরুণ অর্থনীতিবিদের ভাবনা নিয়ে এবারের আয়োজন।

নাজমুল এইচ পলাশ: সহকারী অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নাজমুল এইচ পলাশ: সহকারী অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্কে নতুন স্তর হোক
নাজমুল এইচ পলাশ: সহকারী অধ্যাপক, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রস্তাবিত বাজেটের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। যেকোনো উপায়ে ব্যয় তো করতেই হবে। কিন্তু আয়ের কী হবে, সে সম্পর্কে ভালো কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এমন না যে আয় করার কোনো সুযোগ নেই বা অবস্থা নেই। উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আয়ের খাত ছড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু অজানা কারণে সরকার সে বন্দোবস্তই করতে পারছে না। নাকি চাইছে না, সেটাও বোঝা মুশকিল। এ কারণেই সরকার সহজ পথ বেছে নিচ্ছে।

মুঠোফোনে কথা বলার ওপর খরচ এবার বাড়িয়ে দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এতে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা বাতিল করা উচিত। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যাংকে আমানত রাখার ওপর বছরে আবগারি শুল্ক আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। মানলাম তিন হাজার টাকাই। কিন্তু ১০ লাখ টাকার মালিক আর ১ কোটি টাকার মালিক কি এক কথা হলো? এমন করা যেতে পারে, ১০ লাখ টাকার ওপর আড়াই হাজার টাকাই থাকল। বরং ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ ১০০ টাকা, ৩০ থেকে ৫০ লাখ ২০০ টাকা, ৫০ থেকে ৮০ লাখ ৩০০ টাকা এবং ১ কোটির ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা বাড়ানো হলো। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয় বিবেচ্য হতে পারে।

 কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা এমনকি দুর্নীতি প্রায় প্রতিদিনই দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলো দূর করার কোনো পরিকল্পনা দেখা যায়নি। থোক বরাদ্দের অঙ্ক দেখিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে যা-ই বলা হোক না কেন, স্বাস্থ্য বাজেট কিন্তু এখনো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের নিচে। এখনো এ দেশের মানুষের পকেট থেকে চিকিৎসাবাবদ ৭২ শতাংশ টাকা খরচ হয়। অথচ জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে আমরা যে বড়াই করি, তার সঙ্গে এ বিষয় একদমই যায় না। বাজেটে এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত। সরকার বলুক থোক বরাদ্দের টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের মৌলিক চেহারা বদলে কাজে লাগানো হবে।

 আবার এই বাজেটে গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের বিশদ কোনো কর্মপরিকল্পনাও ফুটে ওঠেনি। আগামী এক বছরে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক বিদেশ থেকে ফেরত আসার আশঙ্কা আছে। তাঁদের জন্যও কিছু বলা নেই। অথচ এক পোশাক খাতেই চাকরি হারাতে পারেন ৭ থেকে ৮ লাখ শ্রমিক। এই বাড়তি চাপ সামলানোর উপায় কি অর্থমন্ত্রী বলবেন না? এ কেমন কথা!

 দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ। এমনকি নেপালের ৫ দশমিক ২ ও ভুটানের ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকেও শিক্ষায় বিনিয়োগ কম। অথচ ইউনেসকোর মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো দেশের জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ শিক্ষায় বিনিয়োগ করা উচিত। আমাদের এ বিনিয়োগ মাত্র ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অথচ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করতে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

 এখন দরকার হচ্ছে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা আর আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরকারিভাবে ‘স্টুডেন্ট লোন’ চালু করা। যদি সেটা সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য ঋণ দেওয়া যেতে পারে। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকেট জমা রেখে তাদের পক্ষে গ্যারান্টি দেবে। এতে যেসব শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা স্মার্টফোন নেই, তারাও ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে যুক্ত হতে পারবে। বাজেট পাস হওয়ার আগে অর্থমন্ত্রী এ বিষয়গুলো নতুন করে ভাববেন বলে আশা করছি।

আবুল কালাম আজাদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আবুল কালাম আজাদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


কর্মসংস্থানে বিশেষ কর্মসূচি চাই
আবুল কালাম আজাদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের বাজেটে কর্মসংস্থানে বেশি গুরুত্ব আশা করেছিলাম। কিন্তু তা দেখা যায়নি। করোনার কারণে ইতিমধ্যে আমাদের শ্রমবাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক ফেরত এসেছেন এবং আরও ফিরে আসার শঙ্কা আছে। আবার তৈরি পোশাক খাতেও ৩০-৪০ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কথা বলা হচ্ছে।

করোনার কারণে এমনিতেই বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার হয়ে গেছেন। তাঁদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল। ইতিমধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে অনেকে লোক চলে গেছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশের মতো হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। কিন্ত বাজেটে এই কর্মসংস্থানে বিশেষ কোনো কর্মসূচি দেখিনি। আমি চাই, করোনা সংকট মোকাবিলায় কর্মসংস্থানে বিশেষ কর্মসূচি।

কর্মসংস্থান এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সবচেয়ে বড় মন্দার মধ্যে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশে যাঁরা ইতিমধ্যে কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের কাজে ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করতে বাজেটে আরও বেশি খরচ করা দরকার। অন্যদিকে প্রতিবছর ২০-২২ লাখ নতুন তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। সামনের দিনগুলো তাঁদের জন্য সুখকর হবে না। তাই বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ করতে হবে, যেন দেশি–বিদেশি নতুন নতুন বিনিয়োগ হয়। তাহলে শ্রমবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করি।

এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। করোনা সংকটে এই খাতে যে বরাদ্দ বাজেটে দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তৈরি পোশাক খাত, বিদেশফেরত শ্রমিক ও নারী-বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ও ভাতা বৃদ্ধি করা দরকার। করোনা এবার স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে। এবার বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আরও বরাদ্দ দেওয়া উচিত। স্বাস্থ্য খাতের একটি বড় সংস্কার প্রয়োজন।

এবার আসি শুল্ক-কর প্রসঙ্গে। কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। কালোটাকার মালিকেরা তাঁদের চেয়ে কম কর দেবেন। তবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় যাতে বিনিয়োগ বাড়ে, সেই আশা করব। মোবাইল ফোন সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করার ফলেও ইন্টারনেট ব্যবহার খরচ বাড়বে। এখন করোনার সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সরকার শুধু রাজস্ব আদায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে এই খাতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য এমনিতেই উচ্চাভিলাসী। নতুন কর বসানোর চেয়ে কর আদায়ের ক্ষেত্রে আরও বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন রাজধানী ঢাকা ও বড় শহরকেন্দ্রিক। বাজেটে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণের একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। এ জন্য বিশেষ বরাদ্দও দেওয়া দরকার।

তাহমিনা আহমেদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
তাহমিনা আহমেদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।


অর্থনীতি কি সামষ্টিক স্থিতিশীলতা হারাতে চলেছে
তাহমিনা আহমেদ: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির এত দিনের গর্ব ছিল এর ম্যাক্রো স্থিতিশীলতা বা সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে এখন যা মনে হচ্ছে, সেই স্থিতিশীলতা সামনের দিনগুলোতে অর্থনীতি হারিয়ে ফেলবে। ম্যাক্রো স্থিতিশীলতা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে অনবরত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। এই ধরনের অর্থনীতিতে মূল্যস্তর যেমন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তেমনি অর্থনীতি বর্ধিত আকারে বিনিয়োগ লাভ করতে থাকে। বর্ধিত বিনিয়োগ থেকে বর্ধিত কর্মসংস্থান হয়। কর্মসংস্থান হলে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ে ও ভোগ বাড়ে এবং সেই বর্ধিত ভোগ আবার উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ায় এবং অর্থনীতিকে গতিশীল ও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ওই অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে লেনদেনও স্থিতিশীল থাকে। বাংলাদেশের মুদ্রা (টাকা) বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ইউএস ডলারের বিপরীতে বিনিময় বাজারে তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতিও এক দশক ধরে গড়ে ৬ শতাংশের অধিক বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই বর্ধিত বিনিয়োগ ও বর্ধিত প্রবৃদ্ধি অর্জন এসেছে মূলত দুটো উৎস থেকে। এক. বাংলাদেশ বর্ধিত হারে বিদেশে তার পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে, যার পরিমাণ গত আর্থিক বছরে ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রবাহের উৎস থেকে আয় লাভের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল। শুধু আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমেই বাংলাদেশ গত আর্থিক বছরে এই উৎস থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছিল। বর্ধিত রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় অর্থনীতিতে বিনিয়োগ ও ভোগকে বাড়িয়ে দিয়ে একটা আশাবাদের মনোভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আজ যেন সবকিছু থমকে গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস নামের মহামারি বিশ্বের অন্যান্য অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চরমভাবে আঘাত করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা বোঝা যাবে আগামী মাসগুলোতে। হতে পারে ক্ষতির পরিমাণটা মাপতে ও বুঝতে আমাদের জন্য লাগতে পারে আগামী ছয় মাস বা পুরো এক বছর। তবে ক্ষতি কত এবং সেই ক্ষতি বাংলাদেশ কত তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠতে পারে, তা নির্ভর করছে করোনার স্থায়িত্বের ওপর এবং বাংলাদেশ কত তাড়াতাড়ি আবার বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আবার নিজের অর্থনীতিকে জুড়ে দিতে পারবে, তার ওপর।

সদ্য যে জাতীয় বাজেট (২০২০-২১) অর্থমন্ত্রী পেশ করেছেন, তা এমন এক সময় প্রণয়ন করছেন, যখন সরকারের আয় তলানিতে, অন্যদিকে ব্যয় আকাশচুম্বী। এর অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার বিশাল ঘাটতি বাজেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘাটতি বাজেট জিডিপির কত শতাংশ হলে সহনীয়, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই মনে করেন, ঘাটতি না হলেই বেশি ভালো হয়। আর ঘাটতি হলে তাকে জিডিপির ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। সরকার অনেক বেশি ব্যয় করলে ঘাটতি বাজেট হবেই। সে জন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব আহরণের থেকে রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ওপর জোর দিতে হবে। যেকোনো সরকারই ব্যয় বেশি করতে থাকলে ওই দেশের অর্থনীতি ঘাটতি বাজেটের দিকেই যাবে। সরকারি ঘাটতি ব্যক্তি খাতেও ঘাটতি তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত ঘাটতি অর্থায়নের মাধ্যমে পুরো অর্থনীতিই অতি ঋণনির্ভর হয়ে পড়ে এবং কোনো কোনো অর্থনীতি ঋণ করতে গিয়ে ঋণের জালে আটকা পড়ে। ওই অবস্থায় আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। অর্থনীতি মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে যায় এবং একপর্যায়ে অর্থনীতিতে বিনিয়োগেও ভাটা পড়ে। দেশে দেশে আর্থিক বিশৃঙ্খলার মূল উৎসই হলো ঘাটতি অর্থায়নের জন্য অতিরিক্ত ঋণ করা। ঋণ অনেক বড় হয়ে গেলে পুরোনো ঋণ শোধ করতে গিয়ে নতুন ঋণ নিতে হয়। একপর্যায়ে ঋণের দায় মেটানো হয় মুদ্রা বা টাকা ছাপিয়ে। টাকা ছাপিয়ে অর্থায়নের পরিণাম হলো অধিক থেকে অধিকতর মূল্যস্ফীতি। সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকা। কিন্তু সমাজের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল রেখে তাদের আয় বাড়াতে পারবে না। বাংলাদেশ সরকারের ২০২০-২১ বাজেট বিরাট আকারের ঘাটতি বাজেটের বিকল্প (অপশন) রেখে রচিত হয়েছে। সরকার কোনো খাতেই ব্যয় কমাতে পারেনি এবং করোনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতকে প্রণোদনার জন্য বিরাট অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ রেখেছে। এই সব ব্যয় ভোগ যত দ্রুতগতিতে বাড়বে, সেই গতিতে উৎপাদন বাড়বে না। ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হবে।

এবারের বাজেটে ঘাটতি বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অর্থ আসবে কোথা থেকে? আসবে সরকারের ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ করা থেকে। তবে অনেকেই মনে করছেন, বছর শেষে ঘাটতি অর্থায়ন আরও বাড়বে। বাড়তি অর্থ আসতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বর্ধিত হারে ঋণ করার মাধ্যমে। এর অর্থ হবে বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেবে। অর্থ ব্যবস্থাপনা যখন টাকা ছাপানোর পর্যায়ে চলে যায়, তখন মাইক্রো স্থিতিশীলতা থাকে না। বিনিয়োগকারী ভোক্তা অর্থনীতির ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার ভালো সমাধান হলো জনপ্রশাসন খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কম ব্যয় করে অর্থনীতির নিজস্ব গতি সঞ্চালনের জন্য অপেক্ষা করা। বর্তমান অর্থনীতি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে। এই অর্থনীতি যাতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করে, সেই লক্ষ্যে অবশ্যই নীতিসহায়তা দরকার। কিন্তু বর্তমানে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতে মূলধনি ব্যয় একেবারে কমে গেছে। ওই ব্যয়কে বাড়াতে হলে ব্যাংকিং খাতকে আরও উপযুক্ত অবস্থানে আনতে হবে এবং পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা ফেরাতে হবে। ব্যক্তি খাত বিনিয়োগের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ না করলে বা এই খাতে যথাসময়ে বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এই অবস্থায় বাজেটে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হওয়া সম্ভব হবে না।

সাজিয়া আহমেদ: প্রভাষক, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
সাজিয়া আহমেদ: প্রভাষক, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।


স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ানো হতাশাজনক
সাজিয়া আহমেদ: প্রভাষক, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট যখন পেশ হলো, তত দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসহ অধিকাংশ আর্থসামাজিক খাতগুলোই নিষ্ক্রিয়প্রায়। কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব অপরিহার্য। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা এবং দুটি প্রকল্প মিলিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত এই অর্থ বাজেটের ৫.১%, যা গতবার ছিল ৫.৮%। এমন কঠিন সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসলেই হতাশাজনক। টেকসই উন্নয়নের স্বাস্থ্য অধ্যায়ে যেন এবারও পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ।

জুনে ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৯০ দিনের লকডাউনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হওয়ায় ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমেছে। অন্যদিকে, প্রায় ৫৮ শতাংশ পরিবার অর্ধাহারে দিন পার করছে এবং ৩৪ শতাংশ পরিবারে রয়েছে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। পুষ্টিহীনতার কারণে এসব পরিবারের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্চে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে । ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা, কৃষি, শিল্প ও নির্মাণ এবং পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট মানুষ বেকার হওয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফেরত আসা অনেকেই কর্মহীন মানুষের দলে যোগ দেবে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয় গত বছরের তুলনায় ২৫% কম হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এই অবস্থায় পুষ্টিহীনতা ও বেকারত্ব দূরীকরণ, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং মহামারির ঝুঁকি কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া গেলে, স্বাস্থ্য খাতই হতে পারে কর্মসংস্থান ও সাধারণ মানুষের আয়ের উৎস।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য খাতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক ধরা হলেও বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল চিত্র করোনাভাইরাসের অভিক্রমণে সুস্পষ্ট। এ দেশের মানুষের আতঙ্ক দূরীকরণ, জীবনরক্ষা আর জীবিকার স্বার্থে স্বাস্থ্য খাতের দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিটিআরসির রিপোর্ট অনুযায়ী অধিকাংশ খাত অকেজো থাকায় মুঠোফোন ও ইন্টারনেটের গ্রাহক কমেছে যথাক্রমে ৩২ লাখ ও ২১ লাখ (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল ২০২০)। সংক্রামক মহামারিকালে, বিনা মূল্যে মুঠোফোনে স্বাস্থ্যসেবার পরিবর্তে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর পর করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫৭ শতাংশ (ভ্যাট ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ, সারচার্জ ১ শতাংশ)। অর্থনৈতিক মন্দা ও অনিশ্চয়তার এই ক্লান্তিলগ্নে স্বাস্থ্য খাতকে কেন্দ্রবিন্দু ধরে বাজেট বাস্তবায়িত হবে—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো অগ্রাধিকারমূলক খাতগুলোর কোনোটিই শীর্ষ পাঁচে জায়গা করতে পারেনি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি)।

এডিপিতে আগামী অর্থবছরেও ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণের জন্য। স্বাস্থ্য খাতকে বাদ দিয়ে শিক্ষার প্রসার, পরিবহনব্যবস্থার উন্নতি, প্রযুক্তি ও উৎপাদন বৃদ্ধিকে উন্নয়ন ভাবা যাবে না। আধুনিক চিকিৎসা, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ, স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা বৃদ্ধি, জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের জন্য এডিপির আরও কিছু প্রকল্প স্বাস্থ্য খাতের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু বরাদ্দ বাড়লেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার ব্যবহার কতটা করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বাধা হতে পারে অপ্রতুল সম্পদ, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি।

মল্লিকা রায়: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মল্লিকা রায়: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।


বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে সৃজনশীল উদ্যোগ লাগবে
মল্লিকা রায়: সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

চীনা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী জ্যাক মার একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি। তিনি বলেছেন, ‘দরিদ্র হয়ে জন্মানোটা দোষের নয়, দরিদ্র হয়ে থাকাটাই দোষের।’ তাঁর মতে, জীবনে উপরে উঠতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্রের উন্নয়ন করতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

কোভিডের কারণে রাষ্ট্রযন্ত্র বহুমাত্রিক ঝুঁকির সম্মুখীন। এমন পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির হার নয়, বরং মানুষের জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখাটাই বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা যে কতটা নাজুক, তা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই পরিষ্কার। বাজেটে কিছু স্বাস্থ্যসামগ্রীতে মূল্য সংযোজন কর কমানো হয়েছে, এটি ভালো দিক। এটাও ঠিক যে এই খাতের বরাদ্দ জিডিপির শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু ১০ বছর আগেও এই বরাদ্দ ছিল জিডিপির ৩ শতাংশের বেশি।

এদিকে ৬৬ দিনের অবরুদ্ধ অবস্থার কারণে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই সেবা, কৃষি ও শিল্প খাতে কর্মরত ছিলেন। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছেন প্রায় আড়াই কোটি লোক। তাঁদের সাময়িকভাবে নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে তাঁদের জন্য অন্য কিছু ভাবতে হবে।

করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা কমানো হচ্ছে। এ অবস্থায় তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেছে নিতে হবে। বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ দ্বিগুণ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও সরকারি বিনিয়োগ প্রায় একই রাখা হয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও করোনার কারণে কৃষির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ খাতের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে বরাদ্দ বেড়ে ১০ শতাংশ হয়েছে। এটি ইতিবাচক দিক। আবার আমরা দেখলাম, সুনামগঞ্জের হাওরের ধান কাটার জন্য লালমনিরহাট থেকে কৃষিশ্রমিক এসেছেন, এটা খুবই উদ্দীপনার বিষয়। কৃষি খাতের জন্য যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তা প্রকৃত কৃষকেরা পাচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ খুবই নগণ্য। একজন তরুণ শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি , যে দেশ শিক্ষা ও গবেষণায় যত বেশি বিনিয়োগ করবে, ভবিষ্যতে তার বেশি সুফল মিলবে। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। মালয়েশিয়ার সরকার ছাত্রছাত্রীদের ৪০ জিবি ইন্টারনেট ফ্রি দেয়, সেটি তাদের অনলাইন শিক্ষা ও গবেষণায় কাজে লাগে। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা করা দরকার। সেটি না করে আমরা দেখছি, মুঠোফোন সেবার ওপর বাড়তি করারোপ করা হয়েছে, যা অনলাইনভিত্তিক সেবা গ্রহণের অন্তরায়।

প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্য কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। অথচ যাঁদের মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, তাঁরা বাজেটে বেশি কর ছাড় পেয়েছেন। যাঁদের মাসিক আয় ৩৩ থেকে ৫৪ হাজার টাকা, তাঁরা ছাড় পেয়েছেন কম। কালো টাকা নামমাত্র কর দিয়ে সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে নিয়মিত করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। বারবার এ ধরনের সুযোগ না দিয়ে কারও কাছে কালো টাকা থাকলে, তা বাজেয়াপ্ত করা হবে—এমন বার্তা দেওয়া প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বাজেটই চূড়ান্ত বাজেট নয়। বাজেটে যে প্রবৃদ্ধির কল্পনা করা হয়েছে, তা অর্জন প্রায় অসম্ভব। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। করোনা–পরিস্থিতিতে জরুরি বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি আরও কিছু সংস্কারমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। দুর্নীতি এবং দুর্বল তদারকব্যবস্থার বাধাগুলো দূর করতে হবে। আমি মনে করি, প্রস্তাবিত বাজেটটি পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধনের মাধ্যমে আরও বেশি সময়োপযোগী এবং দরিদ্রবান্ধব করা সম্ভব। গতানুগতিকতা বাদ দিয়ে সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানো হবে, এটাই প্রত্যাশা।