কর-ভ্যাট কমাতে হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে

>বিদায় ২০১৯-২০ অর্থবছর। আজ থেকে শুরু নতুন একটি অর্থবছরের। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত এক অর্থনীতি নিয়ে শুরু হলো নতুন এ বছর। নতুন অর্থবছরটি নিয়ে কী ভাবছেন ব্যবসায়ীরা? তা নিয়ে ব্যবসায়ী আমের আলীহোসেইনের সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ।
আমের আলীহোসেইন
আমের আলীহোসেইন

দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার প্রায় চার মাস হয়ে গেছে। করোনার সাধারণ ছুটির সময় অনেক খাতের মতো ইস্পাত খাতেও উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশে নেমে এসেছিল। ছুটি প্রত্যাহারের পর এখন কারখানার উৎপাদন কিছুটা বেড়েছে। বিক্রিও আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সাধারণ ছুটির সময় যেসব কাজ বন্ধ ছিল, সেগুলো শুরু হওয়ায় মূলত বিক্রি বেড়েছে। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। অতিমারির সময়েও অর্থনীতি সচল রাখার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, সেটি
ঠিক আছে। 

করোনায় সব খাতের মতো ইস্পাত খাত কঠিন সময় মোকাবিলা করছে। সরকার প্রণোদনা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেশ কিছু ব্যাংকিং সুবিধা দিয়েছে উদ্যোক্তাদের। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেপ্টেম্বরের পর কী হবে? তখন তো ব্যবসার প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ বাড়বে না। ফলে উদ্যোক্তারাও একসঙ্গে চাপ নিতে পারবেন না। এ জন্য সেপ্টেম্বরের পরও ব্যাংকিং সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন অর্থবছরে উদ্যোক্তাদের জন্য নগদ অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে। 

বাজেটে অবকাঠামোসহ নানা খাতে বরাদ্দ রাখার বিষয়টি ইতিবাচক। অবকাঠামো খাতে নতুন ও চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাড়াতে হবে। প্রকল্প শুরুর পর মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে এখন যে সময় লাগে, তা দ্রুত কমিয়ে আনতে হবে। এসব কাজ যত দ্রুত হবে, ততই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজ সহজ হবে। নির্মাণ খাতে কর্মকাণ্ড বাড়লে বিপুলসংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্যই উত্তম। 

নতুন অর্থবছরে বাজেটে আয়কর ও ভ্যাট নিয়ে হতাশা আছে উদ্যোক্তাদের। এখন যে কর ও ভ্যাট আছে, তা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে। ন্যূনতম কর এখনো বেশি। মুনাফা না করলেও কর দিতে হবে। এ কারণে আমাদের মতো কমপ্লায়েন্স কোম্পানির ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে গেছে। এ করোনার মধ্যেও সব মিলিয়ে মুনাফার ৬০-৭০ শতাংশ করবাবদ সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে।

বাজেটে ভ্যাটের আগাম কর ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এটি প্রত্যাহার করা উচিত, না হলে ১ শতাংশের বেশি করা উচিত নয়। কাঁচামাল আমদানির সময় আগাম করবাবদ কোটি কোটিটাকা সরকার নিয়ে নিচ্ছে। এই কর সহজে ফেরত পাওয়া যায় না। 

 কেউ নতুন বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকেও কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে করব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমরা জানি, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চার-পাঁচ বছর লাভের মুখ দেখা যায় না। কিন্তু লাভ না করলেও আয়কর দিতে হবে। এতে কেউ নতুন বিনিয়োগ বা কোম্পানি করতে ভয় পাবে। করের এই দর্শন পাল্টানো উচিত।

আমের আলীহোসেইন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএসআরএম গ্রুপ