জাহাজ ভাঙায় ডুবেছে ব্যাংক

>দেশে খেলাপি ঋণের শতকরা হারে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ আর পরিমাণের দিক থেকে ব্যবসা ও বাণিজ্য খাত সবার শীর্ষে।

বেশি মুনাফার কারণে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ খাত ব্যবসায় অনেকেই যুক্ত হয়েছিল। ব্যাংকগুলোও প্রতিযোগিতা করে এ খাতে ঋণ দিয়েছে। অন্য খাতের ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে এ খাতে যুক্ত করেছে। কিন্তু পরিবেশদূষণ ও দামের ওঠা–নামাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকেই লোকসানে পড়েছেন। ছিটকেও গেছেন কেউ কেউ। কেউ আবার ঋণ নিয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছেন। পালিয়েও গেছেন অনেকে। এভাবেই ব্যাংকগুলোকে ভোগাচ্ছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের শতকরা হারে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ খাত এখন শীর্ষে। এরপরই ছোট, মাঝারি ও কুটির শিল্প (এসএমই) এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খেলাপি ঋণের হার বেশি। এ কারণে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণে ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য খাতেও অবশ্য ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চাইছে না। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ অনেক কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত সোমবার প্রকাশিত ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শতকরা হারে জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ শীর্ষে থাকলেও পরিমাণের দিক থেকে বেশি খেলাপি ব্যবসা ও বাণিজ্য খাত। এই খাতের ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ২৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এরপরই পোশাক খাতের ১ লাখ ১৪ হাজার ২৭০ কোটি টাকার মধ্যে ১১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি। অন্যান্য বড় শিল্প খাতে ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ১০ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, খেলাপি ঋণ যেমন বেড়েছে তেমনি ঋণ পুনঃতফসিলকরণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। গত বছর ২ শতাংশ এককালীন টাকা জমা দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সুদের হার ধরা হয় ৯ শতাংশ। এ সুযোগে অনেক খেলাপি গ্রাহক ঋণ নিয়মিত করে ফেলেন।

এর আগে ২০১৮ সালে ২৩ হাজার ২১০ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ পুনঃতফসিলে নীতিমালা শিথিল করায় গত বছরে এত ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। এসব ঋণ আবার খারাপ হয়ে পড়বে। তবে বড় দুশ্চিন্তা বর্তমান সময় নিয়ে।

গত বছর সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল করা হয় শিল্প খাতের খেলাপি ঋণ, যা মোট পুনঃতফসিল ঋণের ৩০ শতাংশ। এরপরেই সাড়ে ১৮ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। এ ছাড়া ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল হয় বৈদেশিক বাণিজ্য খাতের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলো সব বিচার-বিবেচনা করে ঋণ পুনঃতফসিল করে। এরপর প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়। এর ফলে ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ ১০ ব্যাংকের কাছে। আর পাঁচ ব্যাংকের কাছে খেলাপি ঋণের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

জানা যায়, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপির অঙ্ক ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।