বিলিয়নিয়াররা যা দিচ্ছেন, সেটা কি দান

কোভিড–১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বই চরম আতঙ্কে রয়েছে। মৃত্যুর মিছিল থামছে না। ব্যবসা–বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, উৎপাদন—সবই স্থবির। বৈশ্বিক অর্থনীতি ১৯৩০ সালের মহামন্দার পরে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখে এখন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশে দেশে সরকারগুলো আর আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এমন সংকটের সময়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা সেভাবে এগিয়ে আসছেন না।

এ বছরের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ২ হাজার ৮২৫ জন বিলিয়নিয়ারের মধ্যে মাত্র ৩০৮ জন বা ১০ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ দান করেছেন। যাঁদের সম্পদের মূল্য ১০০ কোটি থেকে বেশি, তাঁদের বিলিয়নিয়ার বলা হয়।

অনেক বিলিয়নিয়ারের দানেও যেন একধরনের প্রহসন লুকিয়ে রয়েছে। কারণ, শীর্ষ ধনীরা যখন মেডিকেল সাপ্লাই ও ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) মতো জিনিসপত্র দেন, সেটাকে কি দান বলা যায়? তা–ও আবার কিছু ধনী অবশ্য নিজেদের নাম ও দানের তথ্য প্রকাশ করেননি। এই অবস্থায় কোনো কোনো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আশা প্রকাশ করেছে যে এখনো চুপ করে থাকা বিলিয়নিয়ারের অনেকে চলতি ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁদের দানের হাত খুলতে পারেন।

বিশ্বজুড়ে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শীর্ষ ধনীরা প্রত্যাশিতভাবে এগিয়ে না আসায় তাঁদের খুব সমালোচনা হচ্ছে। আবার যাঁরা এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের দানের ধরন আর পরিমাণ দেখেও অনেকে বিস্মিত। এ নিয়ে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা একটি জরিপ প্রতিবেদন ছাপায়। তাতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫০ ধনী যে পরিমাণ অনুদান দিয়েছেন, তা তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের নিট মূল্যের (১ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার) মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশের কম। বিশ্বের সর্বোচ্চ ৭৮৮ জন বিলিয়নিয়ার বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত এপ্রিলে রবার্ট রেইচ নামের একজন নিউজউইক–এ লেখেন, ‘তাঁদের সম্পদের তুলনায় দানগুলো খুবই নগণ্য।’

তবে বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাত্র একজন—বিশ্বের ৮০৪তম বিলিয়নিয়ার ও টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসি। তিনিই সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন। যখন তিনি এই অনুদান ঘোষণা করেন, তখন সেটি ছিল তাঁর তখনকার সম্পদের (৩৬০ কোটি ডলার) প্রায় ২৮ শতাংশ। এখন অবশ্য তাঁর সম্পদের মূল্য ৭৩০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৩৫ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী বিল গেটস ও তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের নামে পরিচালিত দাতব্য সংস্থা বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এই দান বিল গেটসের নিট সম্পদের মাত্র দশমিক ২৮ শতাংশ। তাঁর বর্তমান সম্পদমূল্য ১১ হাজার ৭০ কোটি ডলার।

>

বিশ্বে এখন ২,৮২৫ জন বিলিয়নিয়ার আছেন
অথচ তাঁদের মাত্র ৩০৮ জন বা ১০.৯% ভয়াবহ এই করোনাকালে দানের হাত বাড়িয়েছেন
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাক ডোরসি, বিল গেটস ও ভারতের প্রেমজি সবার চেয়ে এগিয়ে
জেফ বেজোস ধনে সবার শীর্ষে থাকলেও দানে সাত নম্বরে, তা–ও নগণ্য

কোভিড–১৯ অনুদানের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন ভারতের আজিম প্রেমজি। অথচ ফোর্বস–এর তৈরি বিশ্ব বিলিয়নিয়ার লিস্টে দেখা যায় সম্পদমূল্যে প্রেমজি ২৫৩তম স্থানে রয়েছেন। তিনি দান করেছেন ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

খুবই অবাক করা ব্যাপার হলো, বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস দানের তালিকায় সাত নম্বরে আছেন। তিনি দিয়েছেন ১০ কোটি ডলার (তখন ১৪,৬৩০ কোটি ডলারের ০.০৭%)। গতকাল শুক্রবার তাঁর সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮২০ কোটি ডলার।

ফোর্বস–এর বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তালিকার ১৬২ নম্বরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জর্জ সরোস ১৩ কোটি ডলারবা সম্পদের ১.৫৭% (নিট সম্পদ ৮৩০ কোটি ডলার), ২২১তম ধনী অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড্রু ফরেস্ট ১০‍ কোটি ডলারের বেশি বা ১.৬৪% (নিট সম্পদ ৯৮০ কোটি ডলার) এবং ৩৭৫ নম্বরে অবস্থানকারী কানাডার জেফরি স্কোলও ১০‍ কোটি ডলারের বেশি বা ১.৯২% (নিট সম্পদ ৫২০ কোটি ডলার) দিয়েছেন।

অনুদানে ৭ থেকে ৯ নম্বরে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ডেল ১০ কোটি ডলার বা ০.৩৫% (নিট সম্পদ ২,৮৬০ কোটি ডলার); মাইকেল ব্লুমবার্গ ৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বা ০.১৩ শতাংশ (নিট সম্পদ ৫৮০ কোটি ডলার); লিন স্কুসটারম্যান ও স্টেসি স্কুসটারম্যান ৭ কোটি ডলার বা ২.০৬% (নিট সম্পদ ৩৪০ কোটি ডলার)। দশে রয়েছেন বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ ধনী স্পেনের অ্যামানসিও ওর্তেগা, যিনি দান করেন ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ০.১১% (নিট সম্পদ ৬,০৬০ কোটি ডলার)।

বিলিয়নিয়াররা যেসব অর্থ দান করেছেন, তা কোভিড–১৯ মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কার ও গবেষণা, মানবিক সাহায্য, স্বাস্থ্যসেবা, ঝুঁকিতে থাকা ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, করোনা পরীক্ষার কাজে ব্যয় হবে।

করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলেও বিলিয়নিয়ারদের বেশির ভাগেরই সম্পদ বেড়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদেরই সম্পদ বেড়েছে ৪৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।