বাফেটকে পেছনে ফেলে লাকি সেভেন আম্বানি

সূত্র: ফোর্বস
সূত্র: ফোর্বস

করোনার কারণে ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যখন সংকুচিত হচ্ছে, তখন বিলিয়নিয়ার ধনীদের বড় অংশই ধনসম্পদে আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। বিশেষ করে গত সপ্তাহে বহু বিলিয়নিয়ারের সম্পদ অবিশ্বাস্য রকম বেড়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস দুনিয়ার শীর্ষ ধনীদের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে।

এই তালিকার শীর্ষ দশে ঢুকেছেন চারজন। তাঁদের মধ্যে এশিয়া ও ভারতের এক নম্বর ধনী মুকেশ আম্বানি ২১তম থেকে এক লাফে সপ্তমে উঠে আসেন। তিনি এই তালিকার শীর্ষ দশে স্থান পাওয়া প্রথম এশিয়ান। এক দিনে তাঁর আয় ৪৫ লাখ ডলার। মুকেশ আম্বানির সম্পদ যেন রকেটের গতিতে বাড়ছে। ব্লুমবার্গের ২০১০ সালের বিলিয়নিয়ারের তালিকায় যেখানে মুকেশের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, সেখানে ১০ বছর পরে তা আড়াই গুণের বেশি।

এই তালিকাতেও যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেটভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ বেজোস ১৮ হাজার ৯২০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ নিয়ে সবার শীর্ষে আছেন। একই দেশের মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ১১ হাজার ১১০ কোটি এবং বিশ্বে বিলাস পণ্যের বৃহত্তম কোম্পানি এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট ও পরিবার ১০ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছেন। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক জাকারবার্গ ৯ হাজার ২০ কোটি ডলার নিয়ে সপ্তম থেকে চতুর্থ স্থানে উঠেছেন।

চতুর্থ স্থান থেকে অষ্টমে নেমে গেছেন বড় দাতা ও বিনিয়োগগুরু খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। গত সপ্তাহে তিনি দাতব্য কাজের জন্য ২৯০ কোটি ডলার দান করায় ফোর্বস-এর তালিকায় পিছিয়ে পড়েছেন।

তালিকার শীর্ষ দশে অন্যদের মধ্যে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ব্যালমার ৫ম (৭,৪২০ কোটি ডলার), ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি অ্যালিসন ষষ্ঠ (৭,৩৭০ কোটি ডলার), রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি সপ্তম (৬,৯৯০ কোটি ডলার), গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ নবম (৬,৮৭০ কোটি ডলার) এবং গুগলের আরেক প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন দশম হয়েছেন (৬,৬৯০ কোটি ডলার)।

>করোনাকালে যখন গোটা বিশ্বের অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে, তখন বিলিয়নিয়ারদের বড় অংশেরই ধনসম্পদ আরও বেড়েছে।

২ থেকে ৯ জুলাই মাত্র সাত দিনে যাঁদের সম্পদ বেড়েছে তাঁদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জেফ বেজোস ১,৬২০ কোটি, এলন মাস্ক ৫৮০ কোটি ও ম্যাকেঞ্জি বোজোস ৫৭০ কোটি; চীনের জ্যাক মা ৪৭০ কোটি, মা হুয়াটেং ৪৬০ কোটি ও কিন ইংলিন ৪৫০ কোটি ডলার; যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক জাকারবার্গ ৪০০ কোটি, চীনের রবিন জেং ৩২০ কোটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালিস ওয়ালটন, জিম ওয়ালটন ও রব ওয়ালটন ৩১০ কোটি ডলার করে এবং চীনের উইলিয়াম লেই ডিং ৩০০ কোটি ডলার।

ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রতিবছর মার্চে বিশ্বের শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের তালিকা প্রকাশ করে। ১০০ কোটিতে ১ বিলিয়ন হয়। এ ক্ষেত্রে যাঁদের সম্পদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি হয়, তাঁদের বিলিয়নিয়ার বলা হয়।

ম্যাগাজিনটির এ বছরের মার্চের তালিকা থেকে নতুন তালিকায় শীর্ষ ১০ থেকে চারজন বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে স্পেনের ইন্ডিটেক্স বা জারা ফ্যাশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যামানসিও ওর্তেগা ৬ষ্ঠ থেকে ১৩তম এবং ৮ম, ৯ম ও ১০ম স্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যথাক্রমে জিম ওয়ালটন, অ্যালিস ওয়ালটন ও রব ওয়ালটন ১৭তম, ১৮তম ও ১৯তম স্থানে চলে গেছেন।

নতুন তালিকার শীর্ষ দশে কোনো নারী বিলিয়নিয়ার নেই। ফোর্বস-এর করা মার্চের তালিকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের অ্যালিস ওয়ালটন ৯ম থেকে ছিটকে ১৭তম স্থানে নেমে গেছেন। তাঁর সম্পদের মূল্য ৫,৭৩০ কোটি ডলার। ১১তম স্থানে আছেন ফ্রান্সের এল’ওরিয়েলের ফ্রাঁসোয়া বেত্তেনকোর্ত মেয়ার্স। তিনি এখন ৬,৪৬০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে নারীদের শীর্ষে। ৬,২৭০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মার্কিন লেখিকা ও জেফ বেজোসের সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি বেজোস। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কোচ ইন্ডাস্ট্রিজের জুলিয়া কোচ ৪,৬৭০ কোটি ডলার নিয়ে চতুর্থ এবং ক্যান্ডি ও পেট ফুডের জ্যাকুলিন মার্স ২,৯০০ কোটি ডলার নিয়ে পঞ্চম। তাঁরা সম্মিলিত তালিকায় যথাক্রমে ২২ ও ৩৬তম।

করোনাকালে সর্বোচ্চ ১০ কোটি ডলার দানকারী টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসি ৮০৪তম থেকে ২৭৭তম স্থানে উঠে এসেছেন। এখন তাঁর নিট সম্পদমূল্য ৭৩০ কোটি ডলার।

১০৩ বছরের পুরোনো ম্যাগাজিন ফোর্বস ১৯৮৭ সাল থেকে বিলিয়নার তালিকা প্রকাশ করে। তাদের তালিকায় বিশ্বের হাজার ৯৫ জন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। অন্যদিকে বিলিয়নিয়ারদের নিয়ে কাজ করা আরেক প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স সম্প্রতি বলেছে, দুনিয়াজুড়ে ২ হাজার ৮২৫ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। সূত্র: ফোর্বস ও বিজনেস ইনসাইডার