করোনায় ওলটপালট এডিপি

এমনকি আগের ২০১৮–১৯ অর্থবছরে এডিপির যত টাকা খরচ হয়েছে, বিদায়ী বছরে তা–ও খরচ করা সম্ভব হয়নি। গতবারের চেয়ে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। নিকট অতীতে কখনো এ রকম দেখা যায়নি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এডিপির এমন বেহাল দশার তথ্য উঠে এসেছে। অগ্রাধিকার পাওয়া শীর্ষ ১০টি প্রকল্পে গত ৩ মাসে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২-৩ শতাংশ। জানা গেছে, করোনার কারণে বহু প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে বা শ্লথগতিতে চলছে। অনেক বিদেশি প্রকৌশলী এখনো কাজে যোগ দিতে পারেননি। স্থানীয় পর্যায়ে রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজও গত এপ্রিল-মে মাসে বন্ধ ছিল। অতীতে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) এডিপির প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়ন হতে দেখা গেলেও বিদায়ী অর্থবছরে তা হয়নি।

২০১৯–২০ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। কাঙ্ক্ষিত হারে বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত এপ্রিলে তা ২ লাখ ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সংশোধিত এডিপির ৮০ দশমিক ১৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, আগের ২০১৮–১৯ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির ৯৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। আগেরবারের চেয়ে বিদায়ী বছরে ৫ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের এমন বেহাল আর দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাস থেকে প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। কিছু কিছু বড় প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চললেও বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে একধরনের অনীহার বার্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতার অভাব আগে থেকেই ছিল। কিন্তু করোনার মতো সংকটের সময়ে কীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনা যায়, সেই পারদর্শিতা দেখাতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা।

সেলিম রায়হান মনে করেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসও এমন সংকটময় থাকবে। তাই এডিপি বাস্তবায়নে প্রকল্পের অগ্রাধিকার ঠিক করা উচিত।

আইএমইডির ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরের আগের এডিপি বাস্তবায়নের কোনো তথ্য নেই। গত ১৬ অর্থবছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর মূল এডিপি তো দূরের কথা, সংশোধিত এডিপিরও পুরোটা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। গত দেড় দশকের মধ্যে প্রতিবছর সংশোধিত এডিপির ৮৮ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে। ওই বছর এডিপির ৭৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।