চীনেই ২,৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি সম্ভব

চীন গত মাসে বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। সুবিধাটি দেখিয়ে সহজেই চীন, ভারতসহ অন্য দেশের বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব। কারণ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির বাজার পণ্য উৎপাদকদের জন্য লোভনীয়। তা ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে চীনের আমদানি বাণিজ্যের মাত্র ১ শতাংশ হিস্যা দখল করতে পারলে দেশটিতে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব। বর্তমানে চীন বছরে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, সেখানে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দশমিক ০৫ শতাংশ।

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনলাইন কর্মশালায় এসব কথা বলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক। দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও র‌্যাপিডের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

চীনের সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, দেশটিতে ৮ হাজার ২৫৬ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা মিলবে। তার আগ পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকা ৫ হাজার ১৬১ পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যটিই ছিল না। তবে সম্প্রতি চীনের শুল্কমুক্ত রপ্তানির সুবিধায় যুক্ত হওয়া নতুন ৩ হাজার ৯৫ পণ্যে কী কী আছে, তা এখনো জানা যায়নি। ফলে সুবিধাটি কতটা কাজে লাগানো যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

অবশ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের তালিকায় প্রধান পণ্যগুলো না থাকলেও বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে চীনে রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ হতে পারে বড় হাতিয়ার, এমনটাই মনে করে উদ্যোক্তারা।

এদিকে তৈরি পোশাক ও চামড়া পণ্যের রপ্তানিতে চীনের বাজারে প্রতিযোগী দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সেটি উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, তৈরি পোশাকে চীনের বাজার হিস্যার ১৯ শতাংশ ভিয়েতনামের দখলে। আর বাংলাদেশের হিস্যা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। চামড়ায়ও ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি পিছিয়ে বাংলাদেশ। চীনে পোশাক ও চামড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম কেউই শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় বিশ্ব অর্থনীতির ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি (৩.৮ ট্রিলিয়ন) ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তাতে ১৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক রপ্তানি ২ লাখ ৪৭ হাজার কোটি ডলার থেকে ৬ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত কমতে পারে। পর্যটন খাতের ব্যবসা কমবে ৫৮ থেকে ৭৮ শতাংশ।

বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতির প্রসঙ্গ টেনে মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, করোনায় গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৯০০ থেকে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার ক্ষতি করেছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ সাড়ে ৭৬ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানিতে ভালো করতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ ছাড়া বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাজার বহুমুখী করতে আসিয়ানের পর্যবেক্ষক দেশ হওয়ার উদ্যোগ দরকার। তা ছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনার বিষয়ে আমরা অনেক কথা বলছি। অথচ বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে সংযুক্ত করার নীতিই নেই।’

চীন থেকে স্থানান্তরিত বিনিয়োগ টানতে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান। তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আনতে আমাদের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান দরকার। লজিস্টিক ও অবকাঠামোর দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি।’

বিদেশি বিনিয়োগ টানতে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে বলে স্বীকার করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘স্থানান্তরিত বিনিয়োগ টানতে অন্যান্য দেশ যেসব সুবিধা দিচ্ছে, বাংলাদেশকেও সে ধরনের সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করতে চাই, যাতে ট্রেন মিস না হয়।’

২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে গেলে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। তাই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে সময় চাইতে পারে।