যে চাকরির চাহিদা বাড়ছে

করোনাভাইরাসের কারণে নতুন বিশ্বের দেখা মিলছে। কাজের ক্ষেত্রে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে, যা মাস ছয়েক আগেও কেউ চিন্তাই করেনি। চকচকে উড়োজাহাজ অলস সময় কাটাচ্ছে বিমানবন্দরে। পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করছে। রেস্তোরাঁতেও একই অবস্থা। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কিংবা বিউটিশিয়ানরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ফলে পর্যটন, ফ্যাশন ব্র্যান্ড, রেস্তোরাঁ ও সৌন্দর্য সেবার চাকরির বাজার মন্দা।

চাকরির বাজারের অবস্থা যে কতটা খারাপ, তা সিভি লাইব্রেরি নামে চাকরির ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তারা বলছে, যুক্তরাজ্যে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-মে) শূন্য পদের সংখ্যা ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেছে। আবার যেসব শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে অনেক প্রতিযোগিতা। একেকটি পদের বিপরীতে আবেদনের হার ৮৪ শতাংশ বেড়েছে।

তাহলে কি যুক্তরাজ্যে চাকরির আশা শেষ? কখনোই না। করোনা কিছু খাতের চাকরি খাচ্ছে ঠিকই, তবে অনেক খাতের জন্য আশীর্বাদ বয়ে নিয়ে এসেছে মহামারি এই ভাইরাস। সেসব খাতে চাকরির চাহিদা বাড়ছে। চলুন দেখে নিই, বর্তমানে কোথায় চাকরির বাজার ভালো।

তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি

সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে ওয়েব ডেভেলপার, অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ পদের চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। কারণ ই-কমার্স থেকে অটোমোবাইল—সব শিল্পকারখানা কিংবা ব্যবসায় বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। দিন দিন সেটি আরও বাড়ছে।

যুক্তরাজ্যের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট কনফেডারেশনের (আরইসি) প্রধান নির্বাহী নিল কারবেরি বলেন, ‘আমরা দেখছি আইটি প্রফেশনালস ও ডিজাইনারদের কাজের পরিধি বাড়ছে, যা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। তাতে অবশ্য পরিবর্তিত বাজার পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বেশ কিছুটা বাড়বে।’

ডেলিভারি ম্যান

করোনায় গত মার্চে লকডাউন শুরুর পর থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে গেছে। তাতে অনলাইন কেনাবেচায় কর্মী চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। শুধু আমাজনেই ১৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে পূর্ণ ও খণ্ডকালীন কর্মী রয়েছেন, যাঁরা পণ্যের গুদাম বা ওয়্যারহাউস ও গ্রাহকদের কাছে নির্দিষ্ট পণ্য পৌঁছে দিতে ড্রাইভারের কাজ করেন।

আমাজনের উদাহরণ যথেষ্ট না হলে শুনুন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হার্মসের গল্প। করোনাকালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার ৫০০ লোক নিয়োগ দেবে। তার মধ্যে দেড় হাজার ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ও প্রধান কার্যালয়ে পূর্ণকালীন কাজ করবে। আর গ্রাহকদের বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দিতে ৯ হাজার ফ্রিল্যান্স কুরিয়ার নিয়োগ দেবে হার্মস।

সুপারমার্কেট

লকডাউনের সময় রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় সব মানুষ ঘরে রান্না করে খেয়েছে। তাতে অন্য অনেক পণ্যের চাহিদা পড়ে গেলেও মুদি পণ্যের বিক্রি ছিল বেশ। তাতে নতুন সুপারমার্কেট কিংবা মুদি পণ্যের খুচরা বিক্রির দোকানে কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। করোনাকালে যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেটগুলোতে ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়ার পর তা স্থায়ী হয়ে গেছে।

লরি ড্রাইভার

কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও করোনায় পণ্যবাহী বড় গাড়ি (এলজিভি) বা লরির চালকের চাহিদা বেড়ে গেছে—যুক্তরাজ্যের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট কনফেডারেশনের (আরইসি) জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তাতে আরও বলা হয়, লরিচালকের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নির্মাণ ও মেরামতের কাজে পারদর্শী ব্যক্তিদেরও খোঁজ করছে নিয়োগদাতারা।

লরিচালকের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাজনের গুদাম থেকে একেকটি বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিনই অতিরিক্ত পণ্য সড়কপথে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাতে নতুন লরি কিংবা এর জন্য চালক তো লাগছেই।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী

মার্চে লকডাউনের শুরুর দিকে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গ্রাহকেরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। তাতে বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতা সেবা দেওয়া ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। তবে গত মাস থেকে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর দিয়ে মোটামুটি ‘ঝড়’ বয়ে যাচ্ছে।

কেবল বাসাবাড়ি নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া বেড়েছে। চাকরিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি আছে। তার মধ্যে রয়েছে আলদি, লিডল ও আইসল্যান্ডের মতো সুপারমার্কেট, ওয়েদারস্পুনস ও লেডব্রোকস ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বনে শুভংকর কর্মকার