এক বছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা

এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৩৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আর বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এক বছরের তুলনায় আরেক বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির এত বড় ব্যবধান গত পাঁচ বছরেও দেখা যায়নি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একদিকে করোনার প্রভাব, অন্যদিকে অনলাইন পদ্ধতি চালু—দুই কারণেই বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে মানুষ খুব বেশি বিনিয়োগ করতে পারেনি বলে সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মচারীরা বলছেন। আবার কয়েক মাস সরকারি অফিস ও ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকার কারণেও বিক্রি কমে গেছে। নতুন বিনিয়োগ দূরের কথা অনেকে মেয়াদপূর্তির আগে বরং সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলেছেন বেশি।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। এ আগ্রহের অন্যতম কারণ ‘উচ্চ সুদ বা মুনাফা’। তবে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রথম সঞ্চয়পত্রের বিক্রির লাগাম টেনে ধরে সরকার। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা, অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনা, মুনাফার ওপর কর আরোপ, এক নামে বেশি না কেনাসহ বিভিন্ন শর্ত আরোপ করায় হয়। এতে অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ কমে যায়।

>করোনার প্রভাব ও অনলাইন পদ্ধতির কারণেই বিক্রি এত কম হয়েছে
এতে অবশ্য সরকারেব্যয় কমবে

সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৯০ হাজার ৩৪২ কোটি টাকার। ওইবার গ্রাহকেরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে নিয়েছিলেন ৪০ হাজার ৪০৩ কোটি টাকার। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভাঙিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি ভাঙিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এক বছরের ব্যবধানে নিট বিক্রি এত কম হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৫ সালের দিকে যাঁরা সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই এবার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই তাঁরা ভেঙে ফেলেছেন। অনেকে নতুন করে বিনিয়োগে আসেননি। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে এসেছে, সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন, এমন সংখ্যা সামান্যই।’

 করোনাকালে বিক্রির চিত্র

সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস, অর্থাৎ জুনে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪১৭ কোটি টাকার। ৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা মোট বিক্রির মধ্যে আসল পরিশোধ হয়েছে, অর্থাৎ ৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলেছেন মানুষ।

আর গত মে মাসে মোট ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হলেও আসল পরিশোধ করা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রি দাঁড়ায় মাত্র ৪৩০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া এপ্রিলে নিট বিক্রি ছিল ঋণাত্মক। আর মার্চ মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৬২৪ কোটি টাকার। ওই মাসে ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। ফলে নিট বিক্রি হয় ১ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।

যোগাযোগ করলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনা করলে সঞ্চয়পত্র কম বিক্রি মানে সরকারের জন্য ভালো দিক। সরকার বরং

কম সুদের ব্যাংকঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে ফেলবে। তবে যেসব মানুষের জন্য সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ বহাল রাখা হয়েছে, তারাই যদি তা কিনতে না পারেন, তাহলে তো এটাকে ভালো খবর বলা যায় না।