সুইডেনের অর্থনীতির কেন এই সংকোচন

এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে সুইডেনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ছবি: রয়টার্স
এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে সুইডেনের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপে যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ অবস্থা ছিল, তখনো কোনো ধরনের লকডাউন কর্মসূচি নেয়নি সুইডেন। বিধিনিষেধেও ছিল না তেমন কড়াকড়ি। তবে এর পরও অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে পারেনি দেশটি। দেশটির সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ৪০ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ ত্রৈমাসিক সংকোচন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

তবে কঠোর লকডাউন নেওয়া দেশগুলোর চেয়েও সুইডেনের অর্থনৈতিক সংকোচন তুলনামূলক কম হয়েছে। বছরের এই দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। একক দেশগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। এই সময়ে স্পেনের অর্থনীতি সংকোচন হয়েছে সাড়ে ১৮ শতাংশ আর ফ্রান্সের ১৩ দশমিক ৮ ও ইতালির ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

সুইডেনের নর্ডিয়া ব্যাংকের প্রধান বিশ্লেষক টরবজর্ন ইসাকসন বলেছেন, ‘এটি প্রত্যাশিত ছিল। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বলা যায় অবস্থা একটু ভালো। যেমন দক্ষিণ ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের অবস্থা ভালো।’

করোনার সংক্রমণ শুরু হলে বেসরকারিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে সুইডেন। একই সঙ্গে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে এবং গণপরিবহন ব্যবহার না করার জন্য বলা হয়। ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিকই ছিল। তবে দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে রপ্তানিনির্ভর। করোনার কারণে বৈদেশিক চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে অর্থনীতি।

কর্তৃপক্ষ বলে আসছে যে দেশের কোভিড-১৯ কৌশলটি অর্থনীতি রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়নি। তারা জোর দিয়েছিল টেকসই লক্ষ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করায়। তবে সরকার আশা করেছিল যে সবকিছু খোলা থাকলে কর্মসংস্থান কম হারাবে এবং ব্যবসায়ের ওপর প্রভাব কমে যাবে। তারপরও সংকুচিত হয়েছে অর্থনীতি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সুইডেন যে কতটা দুর্বল, এটি তারই লক্ষণ। অন্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো সুইডেনের অর্থনীতি ছোট, উন্মুক্ত, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবকিছু খোলা থাকলেও, সুইডেনের অনেক মানুষ রেস্তোরাঁ এবং জিম থেকে দূরে থাকাই বেছে নিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের ওপর আস্থা কমেছে মানুষের। মানুষের মধ্যে একটা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে যে সবকিছু খোলা রাখা হলো, এতে মানুষও মারা গেল আবার অর্থনৈতিক সংকোচন ঠেকানো গেল না। ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে সরকার।

অবশ্য অর্থনৈতিক সংকোচন হলেও এখনো মন্দা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। কারণ বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। কোনো অর্থনীতি তখনই মন্দায় পড়ে, যখন পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হয়। অনেক পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চলতি বছর সুইডেনের অর্থনীতি ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে। নর্ডিক দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে সুইডেনের বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি ৯ শতাংশ, মার্চে যা ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ।