চট্টগ্রামে এখন সোনার ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি

সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় এই করোনাকালে কমে গেছে বিক্রি। তাই বিপাকে আছেন স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক এলাকার মিমি সুপার মার্কেটে।  জুয়েল শীল
সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় এই করোনাকালে কমে গেছে বিক্রি। তাই বিপাকে আছেন স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা। গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক এলাকার মিমি সুপার মার্কেটে। জুয়েল শীল

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। এতে সোনার দোকানে সোনার তৈরি অলংকারের বিক্রি কমলেও পুরোনো সোনা বিক্রি করে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে মানুষের। কারণ, পুরোনো হলেও এখন বিক্রি করলে মিলছে বেশ ভালো দাম।

গত কয়েক দিন চট্টগ্রাম নগরীর বিপণিবিতান, দেওয়ানবাজার ও হাজারিগলি এলাকা ঘুরে অন্তত ১০টি সোনার দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁদের সবাই জানান, সোনার দাম বাড়ায় বেচাবিক্রি একেবারেই নেই। অথচ বেশির ভাগ মানুষই আসছেন পুরোনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করতে। সোনা কেনার চেয়ে বিক্রি করে দেওয়ার এই প্রবণতা আগে দেখেননি তাঁরা।

সোনা বিক্রি করতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পুরোনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করেও কেনা দামের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই এখন বাড়তি লাভে তাঁরা সোনার তৈরি পুরোনো অলংকার বিক্রি করে দিচ্ছেন। দাম কমলে তখন নতুন করে আবার অলংকার কিনবেন। তবে অনেকে করোনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েও পুরোনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার অলংকার বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায়। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট মানের সোনার দাম ৭৪ হাজার ৬৭ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৬৫ হাজার ৩১৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ হাজার ৯৯৬ টাকায়। দেশের ইতিহাসে সোনার এ দাম এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। অন্যদিকে পুরোনো সোনার অলংকার বিক্রি করে মানভেদে প্রতি ভরিতে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম নগরীতে বাজুসের সদস্যভুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার সোনার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বিপণিবিতানেই (নিউমার্কেট হিসেবে পরিচিত) আছে ১০৩টি দোকান। এ ছাড়া বেশির ভাগ দোকান আছে রেয়াজউদ্দিন বাজার, দেওয়ানবাজার ও হাজারিগলি এলাকায়। এর বাইরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে আরও কিছু সোনার দোকান।

>

সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ
তাই ভালো দাম পাওয়ার আশায় মানুষ পুরোনো স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দিচ্ছেন

সম্প্রতি দেওয়ানবাজার এলাকার সোনার দোকানে পুরোনো অলংকার বিক্রি করতে এসেছিলেন গৃহবধূ রহিমা বেগম ও সাহেদা আক্তার। আলাপকালে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার টাকার বেশি বেড়েছে। ভারী অলংকারগুলো তেমন পরা হয় না। এখন যেহেতু বিক্রি করলে ভালো দাম পাব, তাই সব সময় পরা যায় এমন অলংকার রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। পরে দাম কমলে নতুন করে আবার কিনব।’

হালিশহর এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস বেগম প্রায় দুই ভরি ওজনের একটি হার বিক্রি করেছেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৩ বছর আগে ৪০ হাজার টাকা ভরিতে এই হার কিনেছিলেন। এখন বিক্রি করে প্রতি ভরিতে ৫০ হাজার টাকা করে দাম পেয়েছেন।

সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন অলংকার বিক্রি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে বলে জানান বাজুস চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এমনিতে করোনার কারণে অনেক দিন দোকানপাট বন্ধ ছিল। এখন কিছু কিছু বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। অথচ নতুন অলংকারের ক্রেতা একেবারেই নেই। উল্টো ভালো মুনাফার আশায় অনেকে পুরোনো অলংকার বিক্রি করছেন। দাম বাড়ায় সোনার ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি।