ওষুধের উপাদান বানাবে কোডাক

ওষুধশিল্পে কোডাকের আগমন বড় ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
ওষুধশিল্পে কোডাকের আগমন বড় ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ডিজিটাল ক্যামেরা আসার আগে একসময় সারা পৃথিবীতে ক্যামেরার ফিল্ম বিক্রিতে যেসব কোম্পানি বিখ্যাত ছিল, কোডাক তাদের মধ্যে অন্যতম। কোডাক, ফুজি ফিল্মসহ হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতেই ছিল এই ফিল্মের ব্যবসা। কিন্তু প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে 

সেই ফিল্মের ব্যবসা এখন লাটে উঠেছে। ফলে এসব কোম্পানিকে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসা পাল্টাতে হয়েছে।

ফিল্ম বিক্রির ব্যবসাটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোডাককে ওষুধের উপাদান উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন। কোডাক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন সরকার ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দেবে। লক্ষ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে জেনেরিক ওষুধের উপাদানের ২৫ শতাংশ উৎপাদন করা। এতে মার্কিন সরকারের ওষুধ উৎপাদনে বিদেশনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।

১৪০ বছরের পুরোনো কোম্পানি কোডাকের বেলায় এটি একধরনের বাঁক পরিবর্তনই বটে। যারা একসময় ছবি তোলাকে কোডাক মুহূর্ত বা কোডাক মোমেন্ট বানিয়ে ফেলেছিল, তারা এখন ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করবে। ৭০-এর দশকেই তারা ডিজিটাল ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ শুরু করলেও সেই উদ্ভাবন তারা কাজে লাগাতে পারেনি। পরিণামে ২০১২ সালে তারা দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করে। এরপর থেকেই কোম্পানিটি নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক অতীতে তারা উন্নত রাসায়নিক উৎপাদনে কাজ করছিল।

ওষুধশিল্পে কোডাকের আগমন বড় ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিম কন্টিনেঞ্জা গত সপ্তাহে রাসায়নিক উৎপাদনকে তাদের মূল কাজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সরকারের সঙ্গে কোডাকের ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের চুক্তির খবরে গত পাঁচ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে।

জিম কন্টিনেঞ্জা আরও বলেন, ‘আমরা ওষুধের ব্যবসা শুরু করেছি। যদিও বড় আকারে শুরু করতে পারিনি, এটি আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ এনে দিয়েছে।’

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ধারা প্রবর্তনকারী হিসেবে কোডাকের ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস হিসেবে
দেখা যায়। তারা রাসায়নিক শিল্পে বড় শক্তি হিসেবেই দাঁড়াবে।

ছবি ও ক্যামেরার ব্যবসায় কোডাকের ছিল একচেটিয়া রাজত্ব। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ শতাংশ ফিল্ম ও ৮৫ শতাংশ ক্যামেরা বিক্রি হতো কোডাকের। কিন্তু বাজারে তার সেই দাপট দীর্ঘমেয়াদি হলো না। ১৯৭৫ সালে কোডাকের একজন তরুণ প্রকৌশলী প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। কিন্তু তারা ফিল্ম বিক্রি করবে নাকি ডিজিটাল ক্যামেরাকে জনপ্রিয় করবে, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যায়। ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে তখন তারা আর অগ্রসর হয়নি।

অবশ্য ওষুধশিল্পে কোডাকের আগমন একদম নতুন নয়। ১৯৮৮ সালে তারা স্টার্লিং ড্রাগ ইনকরপোরেশন কোম্পানিকে ৫১০ কোটি ডলারে কিনে নেয়। তখনো কোডাক আলোকচিত্রের উপাদান তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানি। তবে আলোকচিত্রে তত দিনে তারা ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে শুরু করেছে। তখনই তারা ব্যবসা বহুমুখী করার চিন্তা করছিল।

এদিকে ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে কোডাক অগ্রসর না হলেও অন্যরা থেমে থাকেনি। ফলে ২০০৪ সালে এসে কোডাক সনাতনি ক্যামেরা বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ফলে ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। মুনাফা কমে যায়। ফলে তারা ওয়াল স্ট্রিটের এসঅ্যান্ডপি সূচক থেকে বাদ পড়ে। সূত্র: সিএনএন