ইজারামূল্য ছাড় চায় বেবিচক

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের সব বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) রাজস্ব আয় কমে গেছে। চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের আয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম দুই মাসে সামান্য কমলেও এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আয় কমেছে ৪৬ থেকে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত।

বেবিচকের আয়ের মধ্যে দুটি ভাগ রয়েছে। এরোনটিক্যাল আয় ও নন-এরোনটিক্যাল আয়। একদিকে আয়গুলো আসে বিমানবন্দরগুলোতে আকাশপথ ব্যবহারের মাশুল (এয়ারস্পেস চার্জ), গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মাশুল ইত্যাদি থেকে। এগুলোই এরোনটিক্যাল আয়। অন্যদিকে আয় আসে দোকান, স্টল, লাউঞ্জ, পুকুর, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, চাষের জমি ইত্যাদি ভাড়া বা ইজারা দিয়ে। এগুলোকে বলা হয় নন-এরোনটিক্যাল আয়। ইজারা দেওয়া হয় সাধারণত জুলাই-জুন সময়, অর্থাৎ এক অর্থবছরের ভিত্তিতে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বেবিচক থেকে ইজারা নেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইজারামূল্যের অন্তত ২৫ শতাংশ মওকুফ সুবিধা প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত ২২ জুলাই। তবে ইজারামূল্য মওকুফ করতে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অনুমোদন লাগবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তাই মওকুফের অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ বিভাগে। অর্থ বিভাগ গত রোববার এ চিঠি পেয়েছে এবং মওকুফ করার যৌক্তিকতা যাচাই করছে বলে জানা গেছে।

বিমানসচিব মহিবুল হকের সভাপতিত্বে ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান তাঁর সংস্থার গত ছয় মাসের আয়ের হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই বছরে আয় আসে ১২০ কোটি টাকার মতো। অন্য বিমানবন্দরগুলো থেকে আয় হয় আরও ২০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ এবং পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটর–এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই খাতকে কোভিড-১৯ যে বিপদে ফেলে দিয়েছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কিছুটা ছাড় দেওয়া উচিত। নইলে তাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয় পড়বে।

বৈঠকে বেবিচকের চেয়ারম্যান ইজারার মাসওয়ারি চিত্র তুলে ধরেন। তখন অবশ্য বিমানসচিব মহিবুল হক পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রতিবছর সম্পূর্ণ ইজারামূল্য দিয়েই কেউ ইজারা নেন। ফলে বেবিচকের এয়ারস্পেস ইজারা দেওয়ায় প্রতি মাসে ইজারামূল্য নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেক সময় বেবিচক অগ্রিম চেক নেয়, যা আর্থিক বিধিবিধানের পরিপন্থী।

তখন বেবিচকের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, দরপত্রের মাধ্যমেই ইজারা দেওয়া হয় বলে ইজারামূল্য ফেরত দেওয়ার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। তবে পুকুর, চাষের জমি ইত্যাদি যাঁরা ইজারা নিয়েছেন, কোভিডের কারণে তাঁদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে ইজারামূল্যে ছাড় দেওয়ার দরকার নেই। তবে কোভিডের কারণে বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান বেবিচকের চেয়ারম্যান। তিনি মার্চ-জুন চার মাসের নন-এরোনটিক্যাল মাশুল ২৫ শতাংশ মওকুফের প্রস্তাব দেন। এতে বেবিচকের আর্থিক ক্ষতি হবে ১৫ কোটি টাকা, যা জুলাইয়ের পরের হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইজারা মাশুল মওকুফের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যাদের ইজারার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয় গেছে এবং আর নবায়ন হবে না, তাদের জন্য ২৫ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ নেই। যাদেরটা নবায়ন হবে, তাঁরাই তা পেতে পারেন। তবে অর্থ বিভাগ সম্মতি না দিলে পরে নিরীক্ষা আপত্তি আসতে পারে। অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে এসব কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিমানসচিব মহিবুল হক প্রথম আলোকে জানান, মওকুফের সিদ্ধান্তের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে—ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন এয়ারলাইনসের অফিসের এপ্রিল-জুনের ভাড়া মওকুফ করা, ইজারা নবায়ন কার্যক্রম ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা এবং পুকুর, খালি জমি ও চাষের জমিতে ইজারামূল্য ছাড় না দেওয়া।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজারা নেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিই ক্ষতির শিকার হয়েছে। আমরা এখন অর্থ বিভাগের দিকে চেয়ে আছি।’