নেতৃত্বগুণেই প্রসার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত নেতৃত্ব সম্মেলনে বক্তব্য দেন (বাঁ থেকে) স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ঊর্ধ্বতন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা রিচার্ড অ্যামবার, প্রথম আলো
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত নেতৃত্ব সম্মেলনে বক্তব্য দেন (বাঁ থেকে) স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ঊর্ধ্বতন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা রিচার্ড অ্যামবার, প্রথম আলো

ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উপযুক্ত নেতৃত্ব থাকলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা আসার পাশাপাশি প্রসারও ঘটে। আর ভালো নেতা হতে নৈতিক গুণসম্পন্ন হতে হবে। ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।

তৃতীয় নেতৃত্ব সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে নির্ধারিত বক্তারা এসব কথা বলেছেন। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম (বিবিএফ) রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে ‘ইন কনভারসেশন উইথ স্যার আবেদ’ শীর্ষক বিশেষ কথোপকথনে অংশ নেন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ। এ ছাড়া বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ, রেকিট বেনকিজারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইন্দো-চীন, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন) আতা সাফদারসহ দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রকৃত নেতৃত্ব ও ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানবকল্যাণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ফজলে হাসান আবেদ। এ অধিবেশন পরিচালনা করেন ব্র্যান্ড ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার।

এ অধিবেশনে ফজলে হাসান আবেদ তুলে ধরেন তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জসমূহ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক গড়ে তোলা এবং কীভাবে তার বিস্তৃতি—সেসব বিষয় জানান তিনি।

ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশে ব্র্যাকের ৬০ শতাংশ ঋণ কর্মকর্তাই পুরুষ। কিন্তু আফগানিস্তানে ঋণ কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই নারী। আফগানিস্তানের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নারী ঋণ কর্মকর্তা নেওয়া হয়েছে। কেননা, নারী ঋণ কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহজেই নারীদের সঙ্গে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। এখানেই নেতৃত্বের পরিকল্পনা করার ক্ষমতা প্রকাশ পায়।’

ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘ভবিষ্যতের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম হবে প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তির ব্যবহার করে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণকারীরা সহজেই ঋণ পাবেন এবং অর্থ স্থানান্তর করতে পারবেন।’ আবার যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আশির দশকে ৬০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে নিবন্ধিত ছিল না। নিবন্ধিত হলেও পরে অনেকে ঝরে পড়ত। ব্র্যাকই প্রথম এক স্কুল, এক শিক্ষক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করে। দেখা গেল, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যেতে লাগল। তিনি মনে করেন, ব্র্যাক হলো নতুন ধারণার একটি গবেষণাগার।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে ফজলে হাসান আবেদ বলেন, মাতৃমৃত্যু কমাতে ইউনিয়নগুলোতে পাঁচ হাজার ধাত্রী কাজ করছেন। মাতৃসেবা দিতে ইতিমধ্যে তিন বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ চালু করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ধাত্রীরা এ প্রশিক্ষণ নিলে মাতৃমৃত্যু হার অনেক কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

সম্পৃক্ততার জন্য যোগাযোগ শীর্ষক অধিবেশনে মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সুদ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে তাঁর ২২ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 

তথ্যপ্রযুক্তির যোগাযোগব্যবস্থা মানুষের জীবনকে সহজ ও সামাজিক করেছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, মুঠোফোন মানুষের মধ্যে সমতা এনেছে। আর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা এনেছে।

বিবেক সুদ মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত যেমন নেতৃত্বকে নিতে হবে, আর এ সিদ্ধান্তের ফলেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মীদের পাশাপাশি সমাজের নানা স্তরের ক্ষমতায়ন বাড়বে।

বাংলাদেশের কৃষকেরাই নেতৃত্বের বড় উদাহরণ বলে মনে করেন রেকিট বেনকিজারের আতা সাফদার। বাংলাদেশে করপোরেট নেতৃত্বের উন্নয়ন শীর্ষক অধিবেশনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে নেতৃত্বগুণের অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ, তারা ১৫ কোটি মানুষের খাদ্য জোগায়। তাদের মেধা ও গুণাগুণ বিচার করার ক্ষমতা অসাধারণ।  

এবারের নেতৃত্ব সম্মেলনে প্রতিপাদ্য হলো ‘রূপান্তরের বিনির্মাণ’। আর সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে শিল্প উন্নয়নের অপার সম্ভাবনার নতুন অধ্যায় উন্মোচন।

সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল অব ইউএস আর্মি অব এশিয়া প্যাসিফিক মেজর জেনারেল রিচার্ড এম বার, থ্রাইভ