ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি

কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর বিবরণীতে ভুল তথ্য প্রদান সিকিউরিটিজ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ১৮ ধারায় এই অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়—এ রকম কোনো তথ্য প্রকাশও করা যাবে না।
আইনি এমন বিধান থাকার পরও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৪০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড বা কেপিপিএল। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আজ রোববার থেকে কোম্পানিটির আইপিওর চাঁদা গ্রহণ শুরু হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা চাঁদা গ্রহণ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসা অনুষদের প্রধান মোহাম্মদ মূসা প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানিটি সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নিজের স্বার্থ নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।
এদিকে, গতকাল শনিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের যুক্তি ও বক্তব্য তুলে ধরেছে কেপিপিএল কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয়, খুলনায় ওয়েস্টার্ন ইন ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় কেপিপিএলের প্রধান কার্যালয় রয়েছে।
আর বিকেলে প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি আবারও সেখানে সরেজমিন পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমে কিছু চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অফিস সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কোনো কাগজপত্র সেখানে ছিল না। বরং একটি কক্ষকে অফিসের আদল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র।
পরিদর্শনকালে হোটেলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক শেখ হাসিফ জানান, শনিবার বন্ধ থাকায় অফিসে কেউ নেই। এর আগে ৩০ এপ্রিল প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের অস্তিত্বহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলন: রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি রেস্টুরেন্টে এই আয়োজন করা হয়। তাতে কোম্পানির চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যগুলো সত্য নয় বলে দাবি করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্যু ব্যবস্থাপক সোনালী ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী এরশাদ ও আইপিও প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেটকমের স্বদেশ রঞ্জন সাহা। কোম্পানির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি এই দুজনও তাঁদের বক্তব্য দেন। এ ছাড়া, প্রথম আলোতে পাঠানো আলাদা প্রতিবাদপত্রেও একই বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, যোগাযোগের সুবিধার্থে কোম্পানির ঠিকানাকে চার পরিচালকের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ১০৩ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করলে কোম্পানিটির লাভ-লোকসান সমান সমান হয়। মুদ্রণজনিত ভুলে সেটি এক কোটি তিন লাখ টাকা হয়েছে।
উল্লেখ্য, লাভ-লোকসান সমান সমান করতে ১০৩ কোটি টাকার ব্যবসা দরকার দাবি করা হলেও আইপিওর বিবরণীতে ২০১০ সালে ৩৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে তিন কোটি টাকার বেশি মুনাফা দেখানো হয়েছে।