এবার আসছে চীনের 'বিশ্বব্যাংক'

চীনের একটি বুলেট ট্রেন  ছবি: ইন্টারনেট
চীনের একটি বুলেট ট্রেন ছবি: ইন্টারনেট

চীন বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, তার মিত্রদেশগুলো এবং জাপানের অত্যধিক প্রভাবে নাখোশ হয়ে নতুন বিশ্বজনীন ব্যাংক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির নাম হবে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি); যা চলতি বছরের শেষ দিকে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল নিয়ে যাত্রা শুরু করবে৷
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের এই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশও সম্পৃক্ত থাকবে। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত এশিয়ার ২২টি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি সম্পদশালী দেশও রয়েছে।
এআইআইবি গঠনের প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িতদের একজন বলেন, চীন মনে করে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যা-ই করে, তাতে তারা তেমন গুরুত্ব পায় না। সে জন্য দেশটির নেতারা নিজস্ব ‘বিশ্বব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এতে তাদের হাতেই থাকে প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও ইউরোপের সঙ্গে স্থলপথের সংযোগ স্থাপন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থায়ন করাই হবে প্রস্তাবিত এই ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য।
ব্যাংকটিতে সিংহভাগ তহবিলের জোগান দেবে এর মূল উদ্যোক্তা চীন। প্রতিষ্ঠানটি প্রাচীনকালে প্রাথমিকভাবে ইউরোপ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনকারী ‘সিল্ক রোড’-এর মতো নতুন আরেকটি মহাসড়ক নির্মাণের ওপর জোর দেবে। পাশাপাশি চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে উপসাগরীয় দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদ পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনসহ এই অঞ্চলে নানা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থের জোগান দেবে প্রতিষ্ঠানটি।
এআইআইবি সরাসরি এডিবির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনা পরিকল্পনা সফল হলে এআইআইবির তহবিলের পরিমাণ হবে এডিবির ১৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিলের দুই-তৃতীয়াংশের সমান।
৬৭টি সদস্যদেশের সংস্থা এডিবির সবচেয়ে বড় দুই শেয়ারহোল্ডার হলো জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের শেয়ার হলো যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৭ ও ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৯৬৬ সালে এডিবির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকেই এর প্রেসিডেন্ট পদটি রয়েছে জাপানের দখলে। আর চীনের শেয়ার মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ।
প্রক্রিয়াটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা জানান, চীন তার পরিকল্পনাটি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং এমনকি ‘শত্রু প্রতিবেশী’ জাপানের সঙ্গেও আলোচনা করেছে। এশিয়ার অনেক দেশই এতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে কেউ এগিয়ে না এলেও চীন একাই সামনের দিকে যাবে।তবে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নেবে না ইতিমধ্যে চীন ১০টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও সই করেছে।
এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশটি ইতিমধ্যে এডিবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চায়না সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সাবেক চেয়ারম্যান জিন লিকুনকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
এডিবির প্রধান তাকেহিকো নাকাও গত মাসের শেষ দিকে সতর্কতার সঙ্গে চীনের এআইআইবি গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান। তবে নতুন ব্যাংকটি শ্রম, পরিবেশসহ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলোকে অবজ্ঞা করে চলতে পারবে না বলেও সতর্ক করে দেন।
কারণ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে চীনারা সুশাসনের তোয়াক্কা করে না এবং বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে বলে প্রায়শই অভিযোগ ওঠে।
এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এশিয়ার অবকাঠামো খাতে এখন থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরে ৮০ হাজার কোটি ডলার করে বিনিয়োগ প্রয়োজন। অথচ সংস্থাটি বছরে মাত্র এক হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়ে থাকে। এ থেকেই অনুমেয় যে এআইআইবির মতো আরও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ: স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, ২৮ ও ২৯ জুন চীনে অনুষ্ঠেয় ‘এশিয়ায় অবকাঠামোগত সংযোগ: অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক একটি সেমিনার শেষ হওয়ার পরই এআইআইবি প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
চীনভিত্তিক বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ), দ্য ডংচেং ডিস্ট্রিক্ট গভর্নমেন্ট অব বেইজিং, চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জেস ও গ্লোবাল ফাউন্ডেশন অব অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করছে। এতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৪৮টি দেশ যোগ দেবে।
বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন জানান, এআইআইবি গঠনের প্রস্তাব আসে সর্বশেষ বালিতে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরামের সম্মেলনে। সেখানেই এআইআইবি গঠনের লক্ষ্যে গঠিত হয় ওয়ার্কিং গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুন ওয়ার্কিং গ্রুপের চূড়ান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও বাসস।