শেয়ার ছেড়ে ৮০ কোটি ডলার সংগ্রহ করছেন অনিল আম্বানি

অনিল আম্বানি l ছবি: ইন্টারেনট
অনিল আম্বানি l ছবি: ইন্টারেনট

ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি অনিল আম্বানি শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ জন্য তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও ধরনা দিয়ে চলেছেন।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসায় যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, তাতেই মূলত অনিলের জন্য শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা সহজ হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক দিন ধরেই তাঁর কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করছিল না, বরং ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছিল। তাই তাঁর কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা থেকে বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি নতুন সরকার গঠনের পর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা যেমন জোরালো হয়ে ওঠে, তেমনি শেয়ারবাজারেও চাঙা ভাব ফিরে আসে। এই সুযোগ নিয়েই রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার রিলায়েন্স টেলিকমিউনিকেশনের নামে পঁুজিবাজার থেকে ৭৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার সংগ্রহ করতে মাঠে নেমেছেন।
ভারতের এই বিলিয়নিয়ারের (১০০ কোটি ডলার বা এর চেয়ে বেশি মূল্যের সম্পদের মালিক) মালিকানাধীন রিলায়েন্স টেলিকমিউনিকেশন সম্পর্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও তাঁরা এখন মত পাল্টাচ্ছেন। ভারতের নতুন অর্থনৈতিক জাগরণের সম্ভাবনাই তাঁদের আগ্রহী করে তুলেছে। তাই তো কোম্পানিটির ৫০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের শেয়ার খুব সহজেই বিক্রি হয়ে গেছে।
পঁুজি সংগ্রহের অনুকূল পরিস্থিতির জন্য অনিল অবশ্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন। কারণ, তাঁর বিজয় অর্জন ও ক্ষমতা গ্রহণের ফলে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে নতুন আশাবাদ সৃষ্টি হয়। আর এই আশাবাদের সুবাদে বিপুল পরিমাণ ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়া ভারতের অনেক শিল্পপতির সামনে অনিল আম্বানির মতো পঁুজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ক্রেডিট সুইসের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ভারতের সবচেয়ে বেশি ঋণগ্রস্ত ১০টি গোষ্ঠীর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১০ হাজার কোটি ডলার।
গত মে মাসে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে অনিল বিদেশি বিনিয়োগকারী তথা পঁুজির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। তখন তিনি নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শেয়ারবাজার থেকে অনিল আম্বানির পঁুজি সংগ্রহের চেষ্টা দেখে ভারতের আর্থিক খাতের অনেক ব্যক্তিই বিস্মিত হয়েছেন। কারণ, তাঁদের ধারণা ছিল, অনিল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাবেন না। মুম্বাইভিত্তিক একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান বলেন, ‘তাঁর (অনিল) প্রতি বিনিয়োগকারীদের মনোভাব অনুকূল দেখা যায়নি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যে কেউই কাগজপত্র তৈরি করে আর কিছু ভালো সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসতে পারলেই বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারবেন।’
ভারতের চতুর্থ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি রিলায়েন্স বা আরকম শেয়ারবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থ ৭০০ কোটি ডলারের নিট ঋণ পরিশোধে ব্যয় করবে। এতে কোম্পানিটির ওপর সুদের দায় কমবে। টেলিযোগাযোগ খাতে রিলায়েন্সের প্রতিযোগীদের মধ্যে রয়েছে ভারতি এয়ারটেল ও ভোদাফোন।
তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনিল আম্বানির ৮৫ শতাংশ শেয়ার কিনলেও ভারতের অন্যান্য ঋণগ্রস্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার ব্যাপারে কম আগ্রহী। কারণ, ওই সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ও পরিচালনা কার্যক্রম দুটোই এখন দুরবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে।
এদিকে মোদির বিজেপি সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্প প্রকল্পগুলো পুনরায় চালুর ব্যাপারে সহায়তা করা এবং ধঁুকতে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে তেল সরবরাহ করতে যাচ্ছে। এতে বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী গৌতম আদানির আদানি গ্রুপের মতো অন্যান্য শিল্পগোষ্ঠী উপকৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিলিয়নিয়ার ফিন্যান্সিয়ার কটক ব্যাংকের প্রধান উদয় কটক বলেন, অনেক বছর ধরেই প্রবৃদ্ধির মুখ না দেখলেও অনিল শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা অন্যান্য ধনকুবেরের জন্য মন্দাকবলিত ভাগ্য মেরামতে দ্রুত উৎসাহিত করবে।
উদয় কটক আরও বলেন, ধনকুবের-শিল্পপতিদের আর বেশি দেরি করা উচিত নয়। যেহেতু অর্থ সংগ্রহের পথ খোলা রয়েছে, সেহেতু তাঁরা দ্রুত ব্যবসায়ের ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র পুনর্গঠন করে নিতে পারেন।
অনিল আম্বানি আরেকটি কারণেও বিশ্বব্যাপী আলোচিত। সেটি হলো, তিনি তাঁর স্ত্রী (সাবেক অভিনেত্রী) টিনা আম্বানির জন্মদিনে তাঁকে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের একটি বাড়ি উপহার দেন। দামের দিক থেকে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস৷