ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৮ সাল নাগাদ এক হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এটা বর্তমানের ৬৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্যের দ্বিগুণের কাছাকাছি৷ তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরিই ভারতের অনুকূলে৷ আর বড় ধরনের ঘাটতিতে আছে বাংলাদেশ৷ এ অবস্থায় বাণিজ্যের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান অশুল্ক বাধাগুলো অপসারণ এবং অবকাঠামোসংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। এমনটাই মনে করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)। সংগঠনটি একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পুরোপুরি ভারতের অনুকূলে থাকায় এবং সে দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি না বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৬১০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য। ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ঘাটতি ৫৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটি অবশ্য ভারতীয় অর্থবছরের (এপ্রিল-মার্চ) হিসাব। ভারতে আশানুরূপ হারে কেন রপ্তানি বাড়ছে না, জানতে চাইলে ইন্দো-বাংলা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি, সেসব পণ্য আবার আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কম৷ শুধু বাজারসুবিধা থাকলেই রপ্তানি বাড়ে না।’ মাতলুব বলেন, ‘ভারতে পণ্য রপ্তানি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সে দেশের বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দেশে একক অথবা যৌথ বিনিয়োগ৷ তাহলেই এ েদশের পণ্য রপ্তানি বাড়বে। যেমন প্যারাসুট তেল এ েদশে তৈরি করে তা সহজেই ভারতে রপ্তানি করা যায়৷ এ ক্ষেত্রে তারা শুল্কমুক্ত সুবিধাও পাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আহমেদাবাদ থেকে পণ্য তৈরি করে তারা কলকাতায় বিক্রি করছে৷ বাংলাদেশ থেকে এটা সহজেই করা যায়। ইন্দো-বাংলা চেম্বার থেকে এ বিষয়টি জোর দেওয়া হচ্ছে৷’ মাতলুব আরও জানান, সান ফার্মা, এশিয়ান পেইন্টস, ডাবর, ম্যারিকোর মতো কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এ েদশে বিনিয়োগ করেছে, পণ্যও তৈরি করছে। কিন্তু তারা নিজের দেশে রপ্তানির চেয়ে এ েদশের বাজার ধরায় ব্যস্ত। সিআইআইও মনে করে যে বিশাল বাণিজ্য-ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে যদি ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বড় ধরনের বিনিয়োগে এগিয়ে আসে৷ বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় মোট বিনিয়োগ ২০১৩ সাল শেষে ২৫০ কোটি ডলারে উপনীত হয়েছে৷ এর মধ্যে গত বছর এসেছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে নিজেদের এমন মতামত তুলে ধরে সিআইআই৷ গত বুধবার রাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। সিআইআইয়ের মহাপরিচালক চন্দ্রজিত ব্যানার্জি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘নতুন দিগন্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই সফর দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের গতিকে যেমন ত্বরান্বিত করবে, তেমনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়বে৷ সুষমা স্বরাজের তিন দিনের বাংলাদেশ সফর আজ শুক্রবার শেষ হবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সফর হওয়ায় তাঁর এই সফরকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সিআইআইয়ের চন্দ্রজিত ব্যানার্জি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। যেমন: প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়; আবার লেনদেনের খরচও কম পড়ে৷ দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধাকে বড় সমস্যা চিহ্নিত করে সিআইআই বলেছে, পণ্যের মান ও শ্রেিণ নিয়ে দুই দেশে কিছু ক্ষেত্রে আলাদা মানদণ্ড থাকা একটি বড় সমস্যা৷ ফলে এক দেশের পণ্য আরেক দেশে সব সময় গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয় না৷ এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বন্দর এবং টেলিযোগাযোগ খাতসহ অবকাঠামোসংক্রান্ত যেসব দুর্বলতা আছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। বর্তমানে ২৫টি পণ্য (তামাক ও মাদকজাতীয় পণ্য) ছাড়া সব পণ্যেই বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দিয়েছে ভারত৷ ফলে পণ্য রপ্তানিতে এখন শুল্কগত তেমন বাধা নেই। ভারত বাংলাদেশে প্রধানত তুলা, চিনি, খাদ্যশস্য, গাড়ি, কাপড়, মাছ, খনিজ জ্বালানি, লবণ ও সিমেন্ট রপ্তানি করে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রধানত কাঁচা পাট ও পাটপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া, নিট ও ওভেন পোশাক এবং চা রপ্তানি হয়৷ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কয়েকটি সম্ভাবনাময় শিল্প খাতও চিহ্নিত করেছে সিআইআই। এর মধ্যে আছে ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, গাড়ি, বস্ত্র, জৈব রসায়ন এবং হালকা প্রকৌশল৷ এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সেবা খাত যেমন: তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ওষুধ, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম, পর্যটন খাতে ভারতের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে পারে৷
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে