মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখীই থাকল

শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে জীবনযাত্রার জন্য চড়া ব্যয় কাঁধে নিয়েই ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষ করতে হয়েছে। আর তা প্রতিফলিত হয়েছে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ পরিসংখ্যানে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, গত অর্থবছর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক চেয়েছিল মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে। সেই বিবেচনায় সাফল্য এসেছে। তার পরও অতি সরল ভাষায় এর মানে হলো, ১০০ টাকার পণ্য কিনতে গত বছর ১০৭ টাকা ৩৫ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে।

আর তার আগের অর্থবছর (২০১২-১৩) বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ​ সেই বছর সাধারণ মানুষের ওপর পণ্যমূল্যের চাপ যতটুকু সহনীয় করে আনা সম্ভব ছিল, তা আর গত বছর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

মাসওয়ারি হিসাবে অর্থবছরের শেষ মাস জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ​মে মাসে এ হার ছিল ৭ দশমকি ৪৮ শতাংশ, যা জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ দশ​মিক ৯৭ শতাংশ। এদিক থেকে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরিকল্পনা কমিশনের এনএসই সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্যস্ফী​তির এসব তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছর কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতির হারে বড় ধরনের ওঠানামা ছিল না। বলা যায়, একটা স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়েই মূল্যস্ফীতি গিয়েছে।’

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত খাদ্যপণ্যের দাম বছরজুড়ে চড়া থাকায় তা সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আলোচ্য অর্থবছর শেষে খাদ্যের গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ি​য়েছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

খাদ্যের এই মূল্যস্ফী​তির পেছনে কিছুটা যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে রাজনৈতিক সহিংসতায় খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরবর্তী ছয় মাস দেশে তেমন কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। নিত্যপণ্যের সরবরাহও ব্যাহত হয়নি।তার পরও খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের নিচে নেমে আসেনি।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত বছরজুড়ে চালের বাড়তি মূল্যের কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে গত অর্থবছরে চালের দাম বেশ বাড়তিই ছিল। সাধারণ মানু​ষকে এই বাড়তি মূল্য গুনতে হলেও এতে কৃষকেরা কিছুটা বাড়তি দাম পেয়েছেন। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশে রাজনৈতিক যে সহিংসতা ঘটেছে, সেটির কিছুটা প্রভাব পণ্যমূল্যের ওপর পড়লেও পড়তে পারে। তবে সেটি খুব বেশি নয়।’ 

আবার পল্লি এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেশি দাঁড়িয়েছে। বছর শেষে শহরে খাদ্যের মূল্যস্ফী​তির গড় হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ​যেখানে গ্রামে এই হার হয়েছে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ।  এর মানে হলো, শহরের মানুষকে খাদ্য কেনার জন্য অধিক অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।

মন্ত্রী অবশ্য খাদ্য মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের ​​কেনাকাটা এখন বেশ আগে থেকেই শুরু হয়। এর প্রভাব পড়েছে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিতে। মে মাসে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে তা বেড়ে জুন মাসে হয়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।’

পরিকল্পনামন্ত্রীর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান,  পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামালসহ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।