ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মংলা বন্দর

মংলা বন্দর
মংলা বন্দর

গতিময়তা ফিরে আসছে মংলা বন্দরে। এ বন্দর দিয়ে আমদানি যেমন বাড়ছে, তেমনি হচ্ছে রপ্তানিও। আর তাই লোকসান কাটিয়ে পাঁচ বছর ধরে অল্প অল্প করে লাভের মুখ দেখছে দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দরটি।
এ সময়ের মধ্যে বন্দরটি প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ বন্দর আয় করেছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এ সময়ে বন্দর পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকার ওপরে।
পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরেই মংলা বন্দর অধিক মুনাফা অর্জন করেছে। এ সময় মোট আয় হয়েছে ১৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বন্দর নিট আয় করেছে ৪৮ কোটি নয় লাখ টাকা।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মংলা লাভজনক বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল। এর পর থেকে ধীরে ধীরে বন্দরের অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের মন্দা, দেশের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকা ও রপ্তানি বাণিজ্যে পরিবর্তন হওয়ায় এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি কমে যায়। বন্দরের মাথাভারী প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতাও বন্দর ব্যবহারকারীদের বিমুখ করে তোলে।
পরবর্তী বছরগুলোয় বিশেষত নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন সরকারের অবহেলা এবং পশুর নদের চ্যানেলের নাব্যতা কমে গিয়ে মংলা বন্দরের ব্যবহার উপযোগিতা কমিয়ে দেয়। একপর্যায়ে মংলা বন্দর প্রায় জাহাজশূন্য হয়ে পড়ে। ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত বন্দরের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৫২ লাখ টাকায়। বছরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ১৭০টি থেকে কমতে কমতে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৯৫টিতে।
তবে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বন্দরের উন্নয়নের জন্যে বর্তমান বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এ প্রসঙ্গে মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের নানামুখী প্রায় ৫৫২ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে মংলা এখন লাভজনক বন্দর।’ যেমন: পশুর চ্যানেলে নাব্যতা বাড়াতে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাতে জাহাজ চলাচলের জন্য নৈশবাতির ব্যবস্থা করা হযেছে। কেনা হয়েছে ফাইবার বোট। আবার গাড়ি রাখার জন্য শেড নির্মাণ করা হয়েছে।
খুলনা চেম্বারের পরিচালক মোস্তফা হোসেন জেসান ভুট্টো প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকেরা এখন মংলা বন্দর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। আগে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য ও সার আমদানির প্রায় পুরোটাই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হতো। সম্প্রতি বছরগুলোয় তা অনেক বেড়েছে। মোট আমদানির ৪০ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে আসছে। অন্যদিকে ২০০৯ সাল থেকে এ বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়েছে।
আবার মংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেডে) বিনিয়োগকারীরা শিল্পকারখানা গড়ে তুলছেন। তাঁরা মংলা বন্দর ব্যবহার করছেন।
সূত্র আরও জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ১৫৬টি, পণ্য খালাস ও বোঝাই হয়েছে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন এবং কনটেইনার ওঠা-নামা করেছে ২০ হাজার ৬৫১ টিইউজ। এ সময় মোট আয় হয়েছে ৬৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৪৫টি, পণ্য খালাস ও বোঝাই হয়েছে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন এবং কনটেইনার ওঠা-নামা করেছে ৪৩ হাজার সাত টিইউজ।
অবশ্য বন্দর চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এও বলেন, মূলত দুটি সমস্যার কারণে মংলা বন্দরের যোগাযোগব্যবস্থা আটকে রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু। মাওয়ায় সেতুটি নির্মাণ হলে মংলা বন্দরের চিত্র পাল্টে যাবে। আর দ্বিতীয়টি হলো বন্দরের চ্যানেলে নাব্যতাসংকট। তবে বন্দরের পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে জাহাজ আগমনের পরিমাণ আরও বাড়বে। আর জাহাজ আগমন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে।