বাজেট ঘাটতি এখন জিডিপির ৩%

অর্থমন্ত্রী চেয়েছিলেন বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে রাখবেন। প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই কাজে তিনি ভালোভাবেই সফল হয়েছেন। কেননা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩ শতাংশ। অবশ্য তা হয়েছে উন্নয়নসহ সার্বিক ব্যয় কম থাকায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও নিজস্ব উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘাটতি অর্থায়নের যে হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রস্তুত করেছে, তা থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এটি অবশ্য সাময়িক হিসাব। এই পরিসংখ্যান অনুসারে, গত অর্থবছর দেশি-বিদেশি ঋণ নিয়ে ৩৫ হাজার ৪৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন করতে হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা।
সাধারণত সরকার কর থেকে রাজস্ব আয় করে ব্যয় মেটানোর জন্য। তাতে পুরো ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। তাই সরকারকে ঋণ করতে হয়। এটি ঘাটতি অর্থায়ন হিসেবে পরিচিত।
আলোচ্য অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের প্রকৃত পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেট অনুসারে, সরকারের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ২৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার কথা ছিল। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম ঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে সরকারকে। অথচ তার আগের বছরই সরকার ১৭ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়, তা থেকে একই সময়ে পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাদ দিলে যা থাকে, তাকেই প্রকৃত বা নিট ঋণ বলা হয়।
ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমে যাওয়ার বিপরীতে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ অনেক বেড়ে গেছে। সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ১১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবে তা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে সরকার ১৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকার ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নিয়েছে যেখানে তার আগের বছর নিয়েছিল দুই হাজার ৮৮৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের সিংহভাগ আবার আসে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র থেকে।
ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ মিলিয়ে নির্ধারিত হয় অভ্যন্তরীণ ঋণ। বাকিটা হলো বৈদেশিক ঋণ। আলোচ্য অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে সরকার ১৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের অর্থবছর সরকার নিয়েছিল ১৫ হাজার ৮০ কোটি টাকার ঋণ।
যোগাযোগ করা হলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতির দিক বিবেচনায় নিলে ঘাটতি অর্থায়ন কম হওয়া ভালো হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে চিন্তা করলে, সরকারকে অবশ্যই বেশি ব্যয় করতে হবে। তার মানে ঘাটতি অর্থায়নও বাড়বে।
রাজনৈতিক সহিংসতার প্রভাবে গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল শ্লথ। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ও ছিল ধীর। তবে বছরের শেষার্ধে উন্নয়ন ব্যয় গতি পায়। শেষ পর্যন্ত সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। মূল এডিপির আয়তন ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা থাকলেও পরে তা কমিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার ঋণ গ্রহণ বেশি বাড়াতে চায়নি। আর রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও মোটামুটি ভালো ছিল। তবে কয়েক বছর ধরেই আমরা প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছি না। আর বাজেট ব্যয়ও কম হয়েছে।’ সব মিলিয়ে ঘাটতি অর্থায়ন নিচের দিকে ছিল বলে মনে করেন তিনি।
গত অর্থবছরের মোট কর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কর রাজস্বের সিংহভাগই আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আদায়কৃত কর থেকে যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় সরকারকে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে জায়েদ জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ে হলেও উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ জন্য ব্যয় করতে হবে। আর তাই চলতি অর্থবছর শেষে ঘাটতি অর্থায়ন বেড়ে যাবে।