প্রথম প্রান্তিকে এনবিআরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৫.৮৭%

চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ২৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসব খাত থেকে ২৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। এনবিআরের হালনাগাদ তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে।
এনবিআর এখন কর আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ফাঁকি দেওয়া কর বা অনাদায়ি কর আদায়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, খেলোয়াড়, ঠিকাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতারা সঠিকভাবে কর দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। এসব শ্রেণি-পেশার করদাতাদের কর নথি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত বাংলাদেশ আপডেট প্রতিবেদনেও এনবিআরের এসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায়ে কয়েক বছর ধরে ভালো করলেও গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তাই এখন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ে মনোযোগী হয়েছে। এ ছাড়া কর-সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দিচ্ছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক আদায়ের পরিমাণ নয় হাজার ৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাত হাজার ৮১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন কর—চার হাজার ১৫১ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি শুল্ক তিন হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক এক হাজার ৩২৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে সাধারণত মূল্য সংযোজন কর, আবগারি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও টার্নওভার ট্যাক্স আদায় করা হয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এক হাজার ৪২৪ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। স্থানীয় পর্যায়ে মূসক আদায় হয়েছে ছয় হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। আর সম্পূরক শুল্ক তিন হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক ৪১ কোটি টাকা ও টার্নওভার কর এক কোটি ছয় লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
প্রত্যক্ষ কর আদায়ে সবচেয়ে কম—১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ খাতে আলোচ্য সময়ে কর আদায় হয়েছে আট হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে সাত হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। আর আয়কর খাতে আদায় হয়েছে এ বছর আট হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। তবে ভ্রমণ করের হার এ বছর থেকে বাড়ানো হয়েছে। তাই গতবারের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি হয়ে প্রথম তিন মাসে ২০৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এনবিআরের কর কর্মকর্তারা মনে করেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক সূচকগুলো ভালো থাকায় রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো। এ অবস্থা চলমান থাকলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে বলে তাঁরা মনে করেন।