শ্রমিকদের সঠিক মজুরি ও ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিতে হবে

স্যানডি লেভিন মার্কিন কংগ্রেসম্যান
স্যানডি লেভিন মার্কিন কংগ্রেসম্যান

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের দর-কষাকষি এবং সংগঠন করার অধিকার থাকা উচিত। তাঁদের প্রতিনিধি তাঁরাই নির্বাচন করবেন এবং মজুরি নিয়েও কথা বলবেন তাঁরা। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি পাওয়া শ্রমিকেরা হলেন পোশাক খাতের বাংলাদেশি শ্রমিক।
বাংলাদেশ সফররত মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্যানডি লেভিন এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
লেভিন আরও বলেছেন, ‘ভবনে আগুন লাগবে না বা ভবন ধসে পড়বে না, তা তো নিশ্চিত করতেই হবে, তারও আগে দেখতে হবে শ্রমিকেরা ঠিকঠাক ও সম্মানজনক মজুরি পাচ্ছেন কি না। আর এসবের জন্যই দরকার ট্রেড ইউনিয়ন। ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন দিতে হবে।’
রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে গতকাল বুধবার লেভিন এসব কথা বলেন। তিন দিনের সফরে এসে গতকাল তিনি ফিরে গেছেন। এই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও এনজিওর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে শ্রম আইন পাস হওয়াতে পরিস্থিতির কিছু উন্নয়ন ঘটবে বলে বিশ্বাস করেন লেভিন। তবে তিনি এ-ও বলেন, এতে আরও কিছু বিষয় দেখার আছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম চালু করলেও বাস্তবে এর কোনো জাদু নেই—এ কথা উল্লেখ করে লেভিন বলেন, ‘দেশজুড়েই গড়ে তুলতে হবে শ্রমিকদের জন্য কাজ করার পরিবেশ এবং এর কোনো বিকল্প নেই।’
লেভিন আরও বলেন, ‘শ্রমিক অধিকারসহ তৈরি পোশাক খাতের জন্য কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাতিল হওয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য-সুবিধা (জিএসপি) বাংলাদেশের ফিরে পাওয়ার একটি পথ তৈরি হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রই তৈরি করে দিয়েছে। সরকার তা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
লেভিন বলেন, ‘জিএসপি-সুবিধা বাতিলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। বলা যেতে পারে, গঠনমূলক কিছু করার জন্যই এ পদক্ষেপ। কারণ, আমরা জানি, বাংলাদেশের জন্য এ শিল্পের গুরুত্ব কত বেশি। এ খাতে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁদের ওপর পরিবারের ভরণ-পোষণ নির্ভর করে এবং যাঁদের বেশির ভাগই নারী।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জিএসপি-সুবিধা ফিরে পাওয়া যেতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে লেভিন বলেন, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কতটা সফল হলো, বিষয়টি তার ওপর নির্ভর করবে।
মার্কিন কংগ্রেসম্যান বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সবার জন্যই তা বেদনার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জন্য এ বেদনা আরও বেশি। কারণ, বাংলাদেশি পোশাক ব্যবহার করে এ দেশগুলো। মর্মান্তিক এ-জাতীয় ঘটনার জন্য অপরাধবোধ লাগে।
এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে যাতে আর না ঘটে, সে জন্য ভূমিকা পালনের কথা উল্লেখ করে লেভিন বলেন, ‘পোশাকশিল্পের বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তনে আমরা বাংলাদেশের সারথি।’
প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের ক্রেতা ও নামী ব্র্যান্ডগুলো একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশও অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সবাই মিলেই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। এসব কথা উল্লেখ করে লেভিন বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বার্থেই পরিস্থিতি ও পরিবেশের উন্নয়ন দরকার।
ব্রিফিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা সরাসরি কিছু না বলে জানান, বাংলাদেশের জন্য জিএসপির ওপর প্রথম পর্যালোচনাটি (রিভিউ) হবে আগামী ডিসেম্বরে। পরের দুটি হবে ২০১৪ সালের জুন ও ২০১৫ সালের জুনে।