রাজনৈতিক ক্ষতি পোষাতে কর ছাড় চায় ঢাকা চেম্বার

রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত ক্ষতি পোষাতে ব্যবসায়ীদের জন্য ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মূল্য সংযোজন কর বা মূসকে ৫০ শতাংশ ছাড় চেয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটি বন্দরের মাশুল ৫০ শতাংশ কমানো এবং নতুন কর আরোপ না করারও দাবি জানিয়েছে।
চেম্বারের সভাপতি হোসেন খালেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে এসব দাবি জানায়। এনবিআরের সম্মেলনকক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ঢাকা চেম্বারের দাবিসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তিনি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা শুল্ক প্রদানে অসৎ পন্থা অবলম্বন করবেন না। যথাযথভাবে আয়কর দেবেন।’ তিনি জানান, এনবিআর ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
হোসেন খালেদ বলেন, চলমান অবরোধ কর্মসূচির ফলে ব্যবসায়ীরা আশানুরূপভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। তাই তাঁদের পক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ কর ছাড় প্রদানের প্রস্তাব করেন তিনি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, হরতাল-অবরোধের ফলে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন বন্দরে পণ্য আটকে আছে। এতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মাশুল দিতে হচ্ছে।
ঢাকা চেম্বার বলছে, এ বছর থেকে সরকার কালোটাকা সাদা করার স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু স্কিম বন্ধ করলেই হবে না, সঙ্গে সঙ্গে কালোটাকার উৎসও বন্ধ করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ডিসিসিআই মূসকে ছাড় ও বন্দর মাশুল কমানোর দাবি ছাড়াও কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। তারা আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা এবং অটোমোবাইল খাতকে জাহাজশিল্পের মতো স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে।
বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারে নির্ধারিত ১৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সব ধরনের শিক্ষা খাতকে মূসক ও করের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে (সিএসআর) খরচ করা অর্থ করমুক্ত রাখার দাবিও জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বার বলেছে, নতুন মূসক আইনসহ সব আইন ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। অসংগতি ও জটিলতা কাটিয়ে আইনসমূহকে সহজ করতে হবে। সংগঠনটি বলেছে, নতুন মূসক আইনে খুচরা পর্যায়ে মূসক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মূসক আরোপ এবং প্রতি তিন বছর পর তা পরিমার্জন করা যেতে পারে।
ঢাকা চেম্বার বলছে, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামোর অভাবে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই-ডিসেম্বরে প্রায় ২ হাজার ৪ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। হরতাল-অবরোধের প্রভাবে ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আর গত ৩৬ দিনে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা।
সভায় ডিসিসিআইয়ের সহসভাপতি শোয়েব চৌধুরী, পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান, আবদুস সালাম, আসিফ এ চৌধুরী, হোসেন আকতার, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, খন্দকার আতিক-ই-রাব্বানী, মোক্তার হোসেন চৌধুরী, নেসার মাকসুদ খান, ওসমান গনি, ডিসিসিআইয়ের মহাসচিব এ এইচ এম রেজাউল কবিরসহ এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।