পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনে অর্থনীতির উজ্জ্বল সাফল্যগাথা

সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩
সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩

পরিমাপের বিভিন্ন সূচকে দেশের অর্থনীতির তুলনামূলক ও উজ্জ্বল সাফল্যগাথার এক চিত্র তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো ‘স্টেট অব দ্য ইকোনমি’ বা ‘সামষ্টিক অর্থনীতির চালচিত্র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই চিত্র তুলে ধরা হয়। কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম এটি উপস্থাপন করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত চার বছরে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমলেও শিল্প খাতের অবদান অনেক বেড়েছে। এর ফলে দেশ ক্রমেই শিল্প অর্থনীতির দেশে ধাবিত হচ্ছে। এটি খুবই ভালো লক্ষণ। এ সময় বলা হয়, ভারতে যখন প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩ শতাংশ আর গড় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১০ শতাংশ; তখন বাংলাদেশের ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধির অর্জন বেশ প্রশংসনীয়।
বিনিয়োগ বাড়াতে তিনটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলো হলো নতুন উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরা।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ছিল প্রায় ৭০ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে সেটি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৮ টাকায়।
অর্থনীতিতে প্রবাসী-আয়কে বড় উদ্দীপনার ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলার। আর ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলারে।
আলোচনা: সরকার যখন বিলবোর্ডের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিভিন্ন সাফল্যগাথা তুলে ধরছে ও এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে ভোট চাইছে, এমন সময় এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ কি ইতিবাচক প্রচারণারই অংশ কি না, জানতে চাওয়া হয় অনুষ্ঠানে।
জবাবে শামসুল আলম বলেন, ‘কেউ যদি বিষয়টিকে এভাবে মেলাতে চান তাহলে মেলাতে পারেন। আমরা শুধু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এসব চিত্র তুলে ধরেছি। গার্ডিয়ান, ইকোনমিস্ট-এর মতো সংবাদপত্র কিংবা অমর্ত্য সেনও বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তাহলে তাঁরা কেন এটা করছেন?’
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ খুবই ভালো দিক। তবে আরও আগে থেকে যদি এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো তাহলে নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের প্রচারণা কি না, এ প্রশ্ন সামনে আসত না।
মসিউর রহমান বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সে সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা সরকারের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা নেহাত কাকতাল মাত্র।