সমস্যা সমাধানে যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব মমতার

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ–ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন l ছবি: প্রথম আলো
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ–ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন l ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রস্তাব করেন, দুই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হোক।
গতকাল শনিবার সফররত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্য-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতার একপর্যায়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যেখানে আটকাবেন, আমাকে বলবেন। আর আমি যেখানে আটকাব, আপনাকে বলব।’
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই) ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্ভাবনার উদাহরণ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাছ আপনার হাতে, এখন মাথা খাবেন নাকি লেজ খাবেন, তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে।’ তিনি মনে করেন, দুই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মনের চিন্তাভাবনা একই রকম। এই অঞ্চলের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর মতে, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চল (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অন্তরঙ্গতা সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এ সম্পর্ক দেনাপাওনা দিয়ে হয় না। আপনারা আমাকে বোন হিসেবে গ্রহণ করুন। আসুন না হৃদয় এক করি। আপনি সব চাইতে পারেন, আমিও সব দিতে পারি। আবার আমিও সব চাইতে পারি, আপনিও সব দিতে পারেন।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে।

সূত্র: ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা
সূত্র: ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা


বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মদ ও তামাক ছাড়া ভারত সব পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দিয়েছে। তবু কিছু অশুল্ক বাধা রয়েছে। এ বাধা দূর করার চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ কেমন এগিয়েছে—এর উদাহরণ দিয়ে মমতা বলেন, এখন ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রবাস-আয় আসে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মূল্যায়ন করা হয় বিস্ময়কর উত্থান হিসেবে। একসময় বাংলাদেশের মায়েরা বাচ্চাদের বলত, পশ্চিম পাকিস্তানে গোলাভরা ধান রয়েছে। এখন পাকিস্তানের মায়েরা বলে, বাংলাদেশে গোলাভরা ধান রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি: অশুল্ক বাধা দূর করে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমবে বলে তিনি মনে করেন। কাজী আকরাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে মানসনদ-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে হবে।
আইবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, অশুল্ক বাধার কারণে ভারত থেকে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পুরোপুরি নিতে পারছে না বাংলাদেশ।
আইসিসির সভাপতি রূপেন রায় বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণে শুধু সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
আইবিসিসিআইয়ের প্রধান উপদেষ্টা মাতলুব আহমাদ বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ইতিমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা এখন সহজেই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের ভিসা পাচ্ছেন। ভারতের অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। আবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ভারতে বিনিয়োগ করতে চান। এখন শুধু বিনিয়োগ পরিবেশ দরকার।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ সরন বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দুই দেশের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এখন আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছি। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু, নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমসহ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন চেম্বারের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।