বাণিজ্যিক পণ্য খালাসে ধীরগতি

চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দর

অবরোধ শুরুর পর ৮০ কনটেইনারে ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার আপেল ও মাল্টা আমদানি করেন ঢাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় এসব কনটেইনারের পণ্য খালাস করতে পারছেন না এই ব্যবসায়ী। কারণ, এসব পণ্য খালাস করতে হলে তাঁকে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে ৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে বন্দর ভাড়া ও কনটেইনার ভাড়ার টাকা।
জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে বেচাকেনা অস্বাভাবিক কমে গেছে। কিছু সংখ্যক কনটেইনার বন্দর থেকে খালাস করলেও পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। কিন্তু এর জন্য কোটি টাকার শুল্ক-কর ও পণ্য রাখার ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে। হরতাল-অবরোধের শুরুর চেয়ে এখন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো বেচাবিক্রি কম।’
ইসলাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, সিয়াম ফ্রুটস কালেকশান ও সাথী ফ্রেশ ফ্রুটস—এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে এসব পণ্য আমদানি করেছেন এই ব্যবসায়ী।
বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করায় বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে গুদাম বা কারখানায় নিতে ব্যবসায়ীরা কোনো সমস্যায় পড়ছেন না। এ কারণে বন্দর থেকে শিল্পকারখানার আমদানি করা কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য খালাসও হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। তবে বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের পণ্য খালাসের হার কমেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি পণ্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোক্তার হাতে স্বাভাবিক সময়ের মতো পৌঁছাচ্ছে না। বাজারে বেচাবিক্রি কমেছে। যাঁরা খালাসও করছেন, তাঁরাও হয়তো গুদামে পণ্য ফেলে রাখছেন। এসব পণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে হরতাল-অবরোধ শুরুর আগে।’
কাস্টমস হাউসের তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেল ছাড়া বন্দরে এখন পড়ে আছে শুল্ক-করসহ ২ হাজার ৮২০ কোটি টাকার আমদানি পণ্য। এর মধ্যে শুল্কায়ন করা কিছু পণ্য এবং প্রক্রিয়াধীন কিছু পণ্যও রয়েছে। এই হিসাব ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর বাইরেও কনটেইনারভর্তি অনেক পণ্য রয়েছে, যেগুলোর শুল্কায়ন-প্রক্রিয়া এখনো শুরু করেননি আমদানিকারকেরা। এসব পণ্যের বড় অংশই বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের বলে শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিকস, খাদ্যপণ্য, ফল, গৃহস্থালি সামগ্রী, গাড়ি ইত্যাদি।
বন্দরের হিসাবে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পড়ে ছিল ২৩ হাজার ৭৭টি। বিভিন্ন কনটেইনারে লাখ টাকার পণ্য যেমন থাকে, তেমনি কয়েক কোটি টাকার পণ্যও থাকতে পারে। গড়ে কম-বেশি প্রতিটি কনটেইনারে শুল্ক-করসহ ২০ লাখ টাকার পণ্য ধরা হলে বন্দরে পড়ে থাকা পণ্যের আনুমানিক মূল্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
তবে যোগাযোগ করা হলে কাস্টমস কমিশনার মাসুদ সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর থেকে নিয়মিত পণ্য খালাস হচ্ছে। আমদানিকারকেরা নথিপত্র দাখিল করার পর দ্রুত শুল্কায়ন করে পণ্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে।’
আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হয়েছে ২ হাজার ৪৩৯টি করে। আর রেলপথসহ বন্দর চত্বর থেকে খালাস হয় ২ হাজার ৩০২টি করে। অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২২ দিনের হিসাবে দৈনিক গড়ে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়েছে ২ হাজার ৬৮৩টি। তবে দৈনিক খালাস হচ্ছে ২ হাজার ৩১৫টি। অর্থাৎ আমদানির হার বাড়লেও কনটেইনার খালাসের হার সেই হারে বাড়েনি। ফলে ধীরে ধীরে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। অবশ্য আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা এখনো বন্দরের ধারণক্ষমতার নিচে রয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে বাজারে অনেক পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে বাণিজ্যিক পণ্য খালাসে ধীরগতি আছে। তবে শিল্পকারখানার কাঁচামাল দ্রুত খালাস করে নিচ্ছেন আমদানিকারকেরা।