ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নেও নজর দেওয়া উচিত

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্প জনপ্রিয় করতে বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রকল্পে জোর দেওয়া উচিত। আর এ জন্য বর্তমান কাঠামোর পরিবর্তে দরকার বেসরকারি খাতের নেতৃত্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
একটি ‘স্মার্ট’ (সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী) পিপিপি মডেল গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তাঁরা ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘২০১৫ সালের পরে বৈশ্বিক পিপিপি উদ্যোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ অভিমত ব্যক্ত করেন প্রবাসী ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, গ্লোবাল এনআরবি ইউএসএ এবং কনসালট্যান্ট অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজার-এফআইসিএন ইউএসএ যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইপিডিসি) চেয়ারম্যান সুলাইমান আজানি উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, ৬ শতাংশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে এবং জিডিপি-বিনিয়োগ হার বর্তমানের ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করতে পিপিপি লাগবে। পিপিপিকে জনপ্রিয় করতে এবং উন্নয়নের প্রধান ধারায় নিয়ে আসতে বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট ছোট প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে। এ ব্যাপারে বেসরকারি খাত ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) সহযোগিতাও নেওয়া যায়।
সরকারের প্রত্যাশার চেয়ে পিপিপিতে বিনিয়োগের হার খুবই কম বলে সুলাইমান হতাশা প্রকাশ করেন। তবে আগামী দিনগুলোতে এ ধরনের প্রকল্প বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গ্লোবাল এনআরবির ইউএসএর চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টসের সদস্য মাহবুবুল জোয়ারদার বলেন, বাংলাদেশে এখন দরকার বেসরকারি খাতের নেতৃত্বে পরিচালিত পিপিপি মডেল। পিপিপি পলিসি করতে হবে স্মার্ট। শুধু তা-ই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক এই মডেলটিকে করতে হবে দক্ষ এবং বাজারভিত্তিক।
বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী, প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে বাংলাদেশের পিপিপিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে জনাব জোয়ারদার বলেন, বাংলাদেশের পানি, বিমানবন্দর, মহাসড়ক, মেট্রোরেল, শিক্ষা, হাসপাতাল, আবাসন খাতে পিপিপির আওতায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ ৮ শতাংশের বেশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।
মাহবুবুল জোয়ারদার আরও বলেন, পিপিপির উদ্যোগে অনেক দেশেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়েছে। দিন দিন এ উদ্যোগে সফল দেশের সংখ্যা বাড়ছে। তবে যে দেশগুলো সফল হয়েছে তারা যুগোপযোগী পিপিপি মডেল গ্রহণের মাধ্যমে তা করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামোর ভিত্তিতেই তারা এ মডেল নিয়েছে।
সেমিনারে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রবাসী ব্যবসায়ী-শিল্প উদ্যোক্তাদের পিপিপি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার অনুরোধ জানান।
গ্লোবাল এনআরবি ইউএসএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুল হক বাংলাদেশে ব্যাংকঋণের সুদের হার অনেক বেশি বলে সমালোচনা করেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এফআইসিএস ইউএসের সভাপতি তাফাজ্জুল করিম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, নিউইয়র্ক স্টেট ডরমিটরি অথরিটির মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধান শামসুল সিদ্দিকী প্রমুখ।