ব্যবসায়ীদের আস্থা কমেছে

বিল্ডের ব্যবসায়ের আস্থা সূচক
বিল্ডের ব্যবসায়ের আস্থা সূচক

দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে যে আস্থা ছিল, তা শেষ ছয় মাসে কমে গেছে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার আস্থা সূচক ছিল ৯ দশমিক ৭৪। তা জুলাই-ডিসেম্বরে এসে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫।
আস্থা কমে যাওয়ায় শেষ ছয় মাসে দেশে বিনিয়োগও কমেছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়ী নতুন করে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) প্রকাশিত ব্যবসার আস্থা সূচকে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার সূচকটি প্রকাশ করা হয়।
তবে ওই সূচকে দেখা যায়, এ বছরের তিন মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা আগামী ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশি আশাবাদী নন। তবুও তাঁদের আশা, এ সময়ে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হতে পারে। সে কারণে তখনকার প্রাক্কলিত আস্থা সূচক ৯ দশমিক ৩৭।
বিল্ড এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই সূচক প্রকাশ করল।
প্রসঙ্গত, ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার (এমসিসিআই) এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমইএফ) যৌথ উদ্যোগে ২০১১ সালের অক্টোবরে বিল্ড গঠন করা হয়। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় চট্টগ্রাম চেম্বার।
জরিপটি পরিচালনায় বিল্ডকে সহযোগিতা করেছে পরামর্শক সংস্থা অ্যাসোসিয়েটস ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (এডিএসএল)। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সূচকের নানা দিক তুলে ধরেন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) কর্মকর্তা সাইফুল হক। তিনি বলেন, সূচক কমে যাওয়ার বড় কারণ হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। কারণ যখন জরিপটি করা হয়েছে, তখন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। তার একটি প্রভাব সূচকে প্রতিফলিত হয়েছে।
সূচকটি গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের হলেও এটি করা হয়েছে এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চের মধ্যে। এ জন্য ১১টি খাতের ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপটি করা হয়।
সূচক কমে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে জরিপে। এগুলো হলো অবকাঠামো, ব্যবসার পরিবেশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থায়ন ও ব্যবসাসংক্রান্ত নীতিমালা। যেমন গত বছরের প্রথম ছয় মাসে অবকাঠামো সূচক যেখানে ছিল ৯ দশমিক ৮৭, তা শেষ ছয় মাসে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৪৭। একইভাবে বিশ্ববাণিজ্যের সূচকও ৯ দশমিক ৮১ থেকে কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৪।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে দেশের ব্যবসার পরিবেশ খারাপ হয়েছে। এ জন্য বেশির ভাগই দুষেছেন রাজনৈতিক অবস্থাকে। এই ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘কোন বিষয়গুলো আপনারা নেতিবাচকভাবে দেখেন?’ তাঁদের জবাব ছিল, রাজনৈতিক অবস্থা, পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুৎ ব্যয়, জ্বালানি তেলের দাম, অবৈধ লেনদেন (আনঅফিশিয়াল পেমেন্ট) ও ব্যাংকের সুদহার।

আস্থা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগেও। সূচক বলছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসের জরিপ করার সময় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ৬৪ শতাংশ বলেছিল তারা বিনিয়োগ করবে। কিন্তু করেছে ৪১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
একইভাবে ৫৬ শতাংশ মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে করেছে ৩৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, ৪৬ শতাংশ উৎপাদন খাতের প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও করেছে ২৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান, ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে করেছে ২০ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং ৪৮ শতাংশ সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে করেছে ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
‘২০১৫ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে কোন বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন’ জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, রাজনৈতিক অবস্থা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম, পরিবহন ব্যয়, দুর্নীতি, ব্যাংকের সুদহার ও মুনাফার ওপর দেওয়া কর। আর কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক, কর্মসংস্থান, বাণিজ্য সহজীকরণ, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ুন রশিদ বলেন, ২০২১ সালে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য সহায়ক পরিবেশ দরকার। গত তিন মাসে দেশে বিনিয়োগ হয়নি। পাশাপাশি ব্যবসার ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। ফলে বিনিয়োগ কম হচ্ছে।
অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, জরিপে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আসা প্রয়োজন ছিল, যেন সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অপর অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার কমতে শুরু করেছে। এটা আরও কমবে।
অনুষ্ঠানে বিল্ডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম, ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।