কক্সবাজারের সাবরাংয়ে হচ্ছে বিশেষ পর্যটন এলাকা

স্বাধীনতার চার দশক পর অবশেষে এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন বা বিশেষ পর্যটন এলাকা তৈরি করার কাজটি গতি পাচ্ছে। কক্সবাজারের সাবরাংয়ে এই পর্যটন এলাকা হচ্ছে। এ জন্য সেখানকার ১ হাজার ২৭ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বেজা সূত্রে জানা গেছে, ওই জমির ৯৩৫ একর খাস এবং ৯২ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন। বেজা ওই জমি পাওয়ার পর সেখানে প্রাথমিক সমীক্ষা চালাবে। এরপর ওই এলাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হবে। তার আগে অবশ্য কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে ১৯৯০ ও ২০১০ সালে দুটি নীতিমালা করা হয়। দুটিতেই পর্যটন খাতের উন্নয়নে বিদেশিদের জন্য এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন করার কথা ছিল। কিন্তু কখনোই সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার বছর আগে কক্সবাজারে এক জনসভায় টেকনাফের সাবরাংয়ে ওই প্রকল্প করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নে সাবরাংয়ের ৯১৩ একর খাসজমিসহ ১ হাজার ১৬৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। গত বছরের ২৬ মে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ওই প্রকল্প অনুমোদন দেয়।
পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার, কলাতলী, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে বিদেশিরা নামতে পারেন না। ভিক্ষুকের উৎপাত ও গোসলের সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা ঘিরে ধরেন। এতে বিরক্ত বোধ করেন বিদেশিরা। সাবরাংয়ে এসব সমস্যা থাকবে না। পাশাপাশি ওই এলাকায় তারকা মানের একাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজ, ওয়াটার ভিলা, নাইট ক্লাব, সুইমিংপুল, কনভেনশন হল, বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এর ফলে ওই এলাকায় কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যেই এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন গড়তে বেজার সঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি সমঝোতাও স্বাক্ষর করেছে। এখন ওই জমি বেজার অনুকূলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এখন সমীক্ষা ও বিনিয়োগের অপেক্ষা।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মুজাহিদিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাস আগেই ওই জমি বেজার অনুকূলে বুঝিয়ে দিতে আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। সবচেয়ে বড় সুবিধা ওই এলাকায় কোনো ঘরবাড়ি নেই। কাজেই জমি বুঝিয়ে দিতে কোনো সমস্যা হবে না।’
প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ব্যবস্থাপক (বিনিয়োগ ও উন্নয়ন) মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ওই জায়গা বেজার অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। জমি বুঝে পাওয়ার পর সেখানে সমীক্ষা চালানো হবে কী কী করা যায়। এরপর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর অগেই কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ হয়ে যাবে। এরপর অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রচুর বিদেশি যেমন বেড়াতে আসবেন, তেমনি দুই থেকে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।