মোবাইল টাওয়ারের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে নতুন দুই টাওয়ার কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এ জন্য টুজি ও থ্রিজি নীতিমালায় টাওয়ার ব্যবহার-সংক্রান্ত অংশ সংশোধন করে নতুন একটি নীতিমালা তৈরি করছে বিটিআরসি।
উদ্যোগটির কারণ সম্পর্কে বিটিআরসি বলছে, বর্তমান নীতিমালায় মোবাইল অপারেটররা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে দেশের মোট মোবাইল টাওয়ারের ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। সংখ্যায় তা অনেক কম। নতুন টাওয়ার কোম্পানি এলে একদিকে অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং কৃষিজমি সংরক্ষণের মতো পরিবেশগত বিষয়গুলোও নিশ্চিত হবে।
নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে মোবাইল টাওয়ারের মালিকানা আর অপারেটরদের কাছে থাকবে না বলে জানা গেছে। বর্তমান থ্রিজি ও টুজি ব্যবহার নীতিমালায় মোবাইল টাওয়ার তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের সব দায়িত্ব মোবাইল অপারেটররা পালন করে থাকে।
তবে মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির এ উদ্যোগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশের বৃহত্তম অপারেটর গ্রামীণফোন মনে করে, টাওয়ার কোম্পানির পাশাপাশি তারা নিজেরাও যেন টাওয়ার নির্মাণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেটওয়ার্কের যথাযথ প্রসার ও কার্যকর সেবা নিশ্চিত করতে হলে তৃতীয় পক্ষের কোম্পানির সঙ্গে অপারেটরদেরও টাওয়ার নির্মাণের অধিকার থাকা উচিত। অন্য দেশে টাওয়ার ব্যবস্থাপনায় যেমন স্বাধীন টাওয়ার কোম্পানি আছে, অপারেটররা নিজেরা অথবা যৌথভাবে চুক্তির মাধ্যমেও এ কাজটি করে থাকে। কৃত্রিম বাধা আরোপ না করে তা বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
বিটিআরসির টাওয়ার ভাগাভাগির পরিসংখ্যানের চিন্তার সঙ্গে একমত না হয়ে গ্রামীণফোন আরও বলছে, ২০০৮ সালে মোবাইল টাওয়ার ভাগাভাগির নীতিমালা চালুর পর গত সাত বছরে ১২ হাজার ৬০০ টাওয়ার নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ভাগাভাগি করে ব্যবহৃত হয়েছে ৫ হাজার ৬০০ টাওয়ার, যা মোট টাওয়ারের প্রায় ৪৫ শতাংশ।
আরেক অপারেটর বাংলালিংক মনে করে, অন্য দেশে বাজার চাহিদার ভিত্তিতেই টাওয়ার ব্যবস্থাপনা নির্ধারিত হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে হওয়া উচিত।
বাংলালিংকের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মাশিদ রহমান বলেন, ‘টাওয়ার ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তের সঙ্গে অপারেটরদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা সরাসরি জড়িত। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।’
তবে বিটিআরসির উদ্যোগকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছে মোবাইল অপারেটর রবি। রবির মুখপাত্র ইকরাম কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাওয়ার শেয়ারিংয়ের বিটিআরসির নতুন উদ্যোগ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে রবি। বিটিআরসি অনেক আগেই এ উদ্যোগ নিতে পারত।’
রবি আরও মনে করে, বর্তমানে বিটিআরসির যে ‘পরোক্ষ অবকাঠামো শেয়ারিং নীতিমালা’ রয়েছে, তাতে মোবাইল অপারেটরদের নিজেদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে টাওয়ারের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে, বৈদেশিক মুদ্রা খরচে যন্ত্রাংশ আমদানি এবং বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়বে। টাওয়ার ভাগাভাগি নিশ্চিত হলে বাংলাদেশে টাওয়ারের ভিড়ও কমে আসবে।
বিটিআরসির হিসাবে, দেশের ছয় মোবাইল অপারেটরের মালিকানায় থাকা মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার ৪০০। যদিও মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া হিসেবে এ সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি।