আমানত বাড়াতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার আরও কমান

আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর গতকাল ঢাকায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথভাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা l প্রথম আলো
আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর গতকাল ঢাকায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের যৌথভাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা l প্রথম আলো

ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধির হার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের ঋণ চাহিদা বাড়লে তাতে সমস্যা তৈরি হবে। তাই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আরও কমিয়ে ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে আয়োজিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে এ পরামর্শ তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি আনিস এ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার। মূল প্রবন্ধের পাশাপাশি একটি আলাদা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এমসিসিআইয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য আদিব এইচ খান।
সম্প্রতি সরকার পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। এ হার আরও কমানোর দাবি করা হয়েছে গতকালের সভায়।
প্রবন্ধে বলা হয়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে, যা ছিল প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই হার ছিল প্রায় ২২ শতাংশ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রতিবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বলেছে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের সীমাও আগামী অর্থবছর ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেটি হলে ব্যাংকে ঋণের চাপ বাড়বে। বেসরকারি খাতের ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে তাই সরকারের উচিত অর্থায়নের বাহ্যিক উৎসের সন্ধান করা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এবং সুপারশপের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর বা মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানান। তবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এসব করকে ‘যৌক্তিক’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কর দিতে না চাইলে ভোগ করবেন না, ঘরে বসে থাকুন। আপনার কষ্টার্জিত টাকা নষ্ট করারও কোনো দরকার নেই। যদি মনে করেন ভোগ করবেন, তাহলে কিছু কর দিতে হবে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ওপর করারোপের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই এটিকে শিক্ষার ওপর কর বলে অভিহিত করছেন। কিন্তু তা না। এটি হচ্ছে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধার কর। সরকার শিক্ষা খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু তা আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। তাই আপনারা নিজেরা উচ্চমূল্যে শিক্ষা নিতে যাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৫০ টাকায় যে শিক্ষা দিচ্ছে, সে শিক্ষার জন্য পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু টাকা সরকার বা রাষ্ট্রকে দেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে তা অর্জনযোগ্য। এই লক্ষ্য পূরণ করা হয়তো কষ্টসাধ্য কিন্তু অসম্ভব নয়।
এর আগে বিশেষ আলোচক হিসেবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাজেটে প্রস্তাবিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই অর্জন করতে হলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটাতে হবে, যা খুবই কঠিন। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
মির্জ্জা আজিজের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০০৮ সালের এনবিআর আর ২০১৫ সালের এনবিআরের দক্ষতা ও সামর্থ্য এক নয়। এখন এনবিআরের দক্ষতা, সামর্থ্য বাড়ার পাশাপাশি করের আওতাও বেড়েছে।’
অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ শতাংশ।
জায়েদী সাত্তার বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের বাইরে উৎপাদনমুখী অন্যান্য শিল্পের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটাতে না পারলে, আগামী অর্থবছরে সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে না।