প্রবাসী-আয় পাঁচ দেশনির্ভর

প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সদ্য বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩২ কোটি মার্কিন ডলারের যে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী-আয় এসেছে, তার মধ্যে ২৩৮ কোটি ডলারই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অর্থাৎ গত অর্থবছরের মোট প্রবাসী-আয়ের প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশের জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, সর্বোচ্চ প্রবাসী-আয় প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবাসী-আয় মূলত পাঁচ দেশনির্ভর। দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও কুয়েত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৫৩২ কোটি মার্কিন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী-আয় দেশে এসেছে। এর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও কুয়েত—এ পাঁচটি দেশ থেকেই এসেছে প্রায় ১ হাজার ১০১ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মোট প্রবাসী-আয়ের ৭২ শতাংশই এসেছে এই পাঁচ দেশ থেকে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও কুয়েত। এসব দেশ থেকে প্রবাসী-আয় এসেছে যথাক্রমে ৩৩৫, ২৮২, ২৩৮, ১৩৮ ও ১০৮ কোটি ডলার।
ওই পাঁচ দেশের মধ্যে চারটিই বাংলাদেশের জন্য ‘শ্রমবাজার’ হিসেবে পরিচিত। শ্রমবাজারের বাইরে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী-আয় দেশে আসছে। প্রতিবছরই এর পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৩২ কোটি ডলার। আর ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো প্রবাসী-আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫০ কোটি ও ১৮৬ কোটি মার্কিন ডলার।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি বসবাস করছেন, তার সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রে কত বাংলাদেশি রয়েছেন, তার সঠিক কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, সেখানে সাড়ে তিন লাখের মতো বৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি রয়েছেন। যাঁদের বেশির ভাগই ওই দেশে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে নিযুক্ত। অনেক বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন।

.
.

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে অর্থ দেশে আসছে, সেগুলো ধরা হয় উচ্চমানসম্পন্ন প্রবাসী-আয়। ভালো প্রণোদনা, অর্থ প্রেরণের প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং সাশ্রয়ী করা গেলে এই আয় দ্রুত বেড়ে যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আয়কে সরাসরি বিনিয়োগ হিসেবে কাজে লাগানোরও সুযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলত দুভাবে প্রবাসী-আয় আসে। একটি আসে পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের জন্য, অন্যটি আসে বিনিয়োগ হিসেবে। বাংলাদেশকে পরিপূর্ণভাবে বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে যুক্তরাষ্ট্রই হয়ে উঠতে পারে প্রবাসী-আয়ের প্রধান উৎস।
বিরূপাক্ষ পাল ও আহসান এইচ মনসুর—এই দুজনের হাত ধরেও বাংলাদেশে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী-আয়।
এদিকে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে, বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে যে সংখ্যক শ্রমিক কাজের জন্য বিদেশে গেছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশই সৌদি আরবে। আর ২৫ শতাংশ গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে ৩৩৫ কোটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৮২ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় দেশে এসেছে। এ পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে যথাক্রমে ২৩ কোটি ও ১৪ কোটি ডলার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী-আয়ে চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে আগের বছরের চেয়ে ৩২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ এসেছে। তবে পঞ্চম অবস্থানে থাকা কুয়েত থেকে প্রবাসী-আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে তিন কোটি ডলার কমে গেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কুয়েত থেকে প্রায় ১১১ কোটি ডলার প্রবাসী-আয় এসেছিল। সেখানে গত অর্থবছরে তার পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি ডলার।
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন শ্রমবাজারে মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯ হাজারেরও বেশি গেছেন ওমান ও কাতারে। মোট প্রবাসী শ্রমিকের ১১ শতাংশ ওমানে এবং প্রায় সোয়া ৪ শতাংশ কাতারে রয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের হিসাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছরে ওমান থেকে প্রবাসী-আয় এসেছে প্রায় ৯২ কোটি ডলার। আর কাতার থেকে এসেছে ৩১ কোটি ডলার। বেশি শ্রমিক যাওয়ার পরও দেশ দুটি থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রবাসী-আয় আসছে না।